দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ টক-মিষ্টি ফল লটকন

763

বাংলাদেশের অপ্রচলিত, আকর্ষণীয়, ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ দেশীয় টক-মিষ্টি ফল লটকন। আশার খবর হচ্ছে, নরসিংদী, ময়মনসিংহের গৌরীপুরসহ দেশের অনেক স্থানেই লটকনের বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে। তবে পুরো বাংলাদেশেই ফলটির বাণিজ্যিক চাষাবাদ সম্ভব। কেননা লটকন উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটি বেশ উপযোগী। বর্ষাকালীন এ ফলটি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইংরেজিতে বার্মিজ গ্রেপ নামে পরিচিত হলেও আমাদের দেশে এ ফলটি বুবি, বুগি, লটকা, লটকো, নটকো ইত্যাদি নামে পরিচিত।

মার্চ মাসের দিকে লটকন গাছে ফুল আসে এবং ফল পরিপক্ব হতে চার-পাঁচ মাস সময় লাগে। লোভনীয় রঙ ও আকৃতির থোকা থোকা লটকন ঢাকাসহ সারা দেশেই পাওয়া যাচ্ছে। ১০-১৫ বছর আগেও লটকনের তেমন চাহিদা ছিল না। দামও ছিল কম। সেজন্য কেউ লটকনের বাগান করার চিন্তা করতেন না। বর্তমানে এ ফলের চাহিদা ও দাম দুটিই বেড়েছে। এমনকি অন্যান্য ফল চাষের তুলনায় লটকন চাষ বেশ সহজ এবং ফলনও ভালো হওয়ায় চাষিরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে লটকন বাজারে পাওয়া যায়। গাছের পুষ্টির সুষমতা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গাছের গোড়া থেকে প্রধান কান্ডগুলোয় বেশি ফল আসে।

একটি পূর্ণবয়স্ক লটকন গাছে পাঁচ থেকে ১৫ মণ পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। বাংলাদেশের আর্দ্র আবহাওয়া লটকন চাষের জন্য বেশ উপযোগী। তাই সারা দেশেই (নিচু এলাকা বাদে) এর বাণিজ্যিক চাষ করা সম্ভব। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে একটি পূর্ণ বয়স্ক লটকন গাছ থেকে প্রতি মৌসুমে ১০০ কেজি পর্যন্ত লটকন সংগ্রহ করা সম্ভব। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজার দখল করে নিয়েছে নরসিংদীর শিবপুরের লটকন। দেশের লটকন ইংল্যান্ড, কাতার, সৌদি আরবসহ নানা দেশে রফতানি হচ্ছে। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, নরসিংদীর লটকন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের ২০-২৫টি দেশে রফতানি হচ্ছে। এতে আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা।

এ বিষয়ে নরসিংদীর লটকন চাষীরা জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শে এবং ব্যাংকের সহায়তায় প্রতিটি জেলায় লটকনের বাণিজ্যিক চাষাবাদ করা যেতে পারে। কৃষির ওপর নির্ভরশীল এলাকা ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক পরিবারের অর্থভাগ্য খুলেছে মৌসুমি ফল লটকন বিক্রি করে। কোনো ধরনের পরিচর্যা ছাড়াই প্রকৃতিগতভাবে জন্ম নেওয়া দেশীয় লটকন ফল (বুবি) বাগানের মালিকরা কয়েক দশক ধরে প্রতি মৌসুমে শুধু লটকন ফল বিক্রি করে ঘরে তুলছেন লাখ লাখ টাকা। উপজেলায় বিচ্ছিন্নভাবে ১০টি ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামের ৮০ হেক্টর জঙ্গলাকীর্ণ জমিতে ছোট-বড় ২৫০টি লটকন ফলের বাগান রয়েছে।

লটকন চাষ কয়েক দশক ধরে উপজেলায় কৃষিনির্ভর বিশাল জনগোষ্ঠীর আর্থিক চাহিদা পূরণসহ অনেকের সংসারে এনে দিয়েছে সচ্ছলতা। কৃষি অধিদফতরের বিভিন্ন সূত্র মতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে ১৬ টন লটকন বিদেশে রফতানি হয়েছে। আশা করা হচ্ছে চলতি অর্থবছরেও বিপুল পরিমাণ লটকন বিদেশে যাবে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার টন লটকন উৎপাদন হয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি ও বাউ লটকনের দুটি জাত উদ্ভাবন করেছে। বারি লটকন-১ ও বাউ লটকন-১ এখন কৃষক পর্যায়ে চাষ হচ্ছে।

লেখক: এস এম মুকুল, বিশ্লেষক ও উন্নয়ন গবেষক।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০৮জুন২০