ধানের খোলপচা রোগের দমন ব্যবস্থাপনা

444

ধান আমাদের প্রধান খাদ্য শস্য। এ দেশের মোট ফসলি জমির প্রায় ৭৬ শতাংশ জমিতে ধান চাষ হয় এর প্রায় ৭০ শতাংশ আধুনিক জাতের ধান চাষ হয়। স্থানীয় জাতের তুলনায় এসব আধুনিক জাতের ধানে রোগ বালাইয়ের আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। বিভিন্ন রোগের কারণে ধানের ফলন প্রায় ১০-১৫ শতাংশ কমে যায়। সাধারণত ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, কৃমি ইত্যাদি রোগ জীবাণুুর আক্রমণে ফসলের রোগ হয়ে থাকে। এসব জীবাণুর কিছু বীজবাহিত আবার কিছু জীবাণু বীজ থেকে গাছ আবার গাছ থেকে পুনরায় বীজে ছড়াতে পারে। ধানের খোল পচা রোগের জীবাণু এমন এক প্রকার ছত্রাক যা ধানের বীজ থেকে গাছ আবার গাছ থেকে পুনরায় বীজে ছড়াতে সক্ষম। তাই এ রোগে আক্রান্ত গাছ থেকে কোন অবস্থাতেই বীজ ধান সংগ্রহ করা যাবে না। বীজ ধানের জমিতে খোল পচা রোগাক্রান্ত গাছ শনাক্ত হলে তা অবশ্যই উপড়ে ফেলতে হবে।

রোগের কারণ: Sarocladium oryzae নামক ছত্রাক।

রোগের বিস্তার
¯ এ ছত্রাকের মাধ্যমে জীবাণু ধানের বীজ থেকে গাছ আবার গাছ থেকে পুনরায় বীজে ছড়াতে সক্ষম।
¯ প্রধানত আক্রান্ত গাছের বীজ থেকেই এ রোগের বিস্তার লাভ করে থাকে। তাছাড়া রোগাক্রান্ত খড় বিকল্প পোষক হিসেবে কাজ করে। মভজরা পোকা আক্রান্ত ক্ষতস্থানের মাধ্যমে এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
¯ ভ্যাপসা গরম ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।
¯ গােেছর থোড় অবস্থায় সব মৌসুমে এ রোগ দেখা যায়।

রোগের লক্ষণ
¯ প্রথমে গাছের শীর্ষ পাতার খোল অর্থাৎ যে খোলে ধানের শীষ থাকে তার উপর গোলাকার বা অনিয়ত দাগ দেখা যায়।
¯ পরে দাগের কেন্দ্র ধূসর ও কিনারা বাদামি বা ধূসর হয়।
¯ ক্রমে দাগগুলো একত্রে মিলে বড় হয়ে সম্পূর্ণ খোলে ছড়াতে পারে।
¯ আক্রমণ বেশি হলে শীষ সম্পূর্ণ বের হতে পারে না।
¯ শীষ পেঁচিয়ে বা আংশিক বের হয়।
¯ শীষে খুব কম সংখ্যক দানা পুষ্ট হয়।
¯ অনেক সময় খোল পচা রোগে আক্রান্ত গাছে মাজরা পোকা আক্রমণের ক্ষত দেখা যায়।
¯ এ রোগ অন্য খোলেও হতে পারে তবে পাতায় হয় না।

প্রতিকার
¯ রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে অর্থাৎ বীজ ধানের জমি খোল পচা রোগ মুক্ত হতে হবে।
¯ পূর্ববর্তী ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
¯ মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে এবং ইউরিয়া সার পরিমাণে কম ব্যবহার করতে হবে।
¯ জমির পানি শুকিয়ে পুনরায় সেচ দিতে হবে।
¯ কার্বেন্ডাজিম/প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিওপি ছত্রাক নাশক প্রতি কেজি বীজ ধানে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।
¯ মাজরা পোকার ক্ষতস্থানের মাধ্যমে খোল পচা রোগের ছত্রাক বিস্তার লাভ করে তাই এ পোকা দমনের জন্য ডায়াজিনন ৬০ ইসি/কার্বোফুরান ৫ জি কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

কৃষিবিদ ড. এনামুল হক সরকার
উপপরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণ কেন্দ্র, ময়মনসিংহ।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১