নতুন জাতের মুরগি উদ্ভাবন, ৫৬ দিনে হবে এক কেজি

528

জার্মপ্লাজম ব্যবহার করে ধারাবাহিক সিলেকশন ও ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে অধিক মাংস উৎপাদনকারী একটি মুরগির জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিএলআরআই)। পরিবর্তনশীল আবহাওয়া উপযোগী এই মুরগির জাতটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘মাল্টি কালার টেবিল চিকেন’ (এমসিটিসি)।

গবেষকদের দাবি, এটি অধিক মাংস উৎপাদনকারী মুরগির জাত। বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং জলবায়ুর প্রেক্ষাপটেই এর উদ্ভাবন করা হয়েছে।

বিএলআরআইয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আতাউল গনি রাব্বানী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মাধ্যমে আমরা মুরগির পরীক্ষা করিয়েছি। এমসিটিসি সংশ্লিষ্ট যত ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার সেগুলোও সম্পন্ন হয়েছে। দেখা গেছে, এই মুরগির মাংসের গুণাগুণ দেশি মুরগির অনুরূপ।’

তিনি আরও বলেন, ‘এমসিটিসি জাতের মুরগির মাংসের স্বাদ ও পালকের রং দেশি মুরগির মতো মিশ্র বর্ণের হওয়ায় খামারিরা দাম প্রচলিত সোনালি বা অন্যান্য ককরেল মুরগির তুলনায় বেশি পাবেন। এই জাতের মুরগি পালনে জায়গার পরিমাণ, ব্রিডিং, তাপমাত্রা, আলো ও বায়ু ব্যবস্থাপনা অন্যান্য মুরগির মতোই। এই জাতের মৃত্যুর হার খুবই কম। বিএলআরআই পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণায় সর্বোচ্চ ১.৫ শতাংশ মৃত্যুহার পাওয়া গেছে।’

বিএলআরআইয়ের গবেষকরা বলছেন, মাংসের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই এ জাতের উদ্ভাবন করা হয়েছে। আট সপ্তাহে (৫৬ দিনে) এই মুরগির গড় ওজন হবে ৯৭৫ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত। এ ওজন হতে প্রতিটি মুরগির প্রায় ২.২০-২.৪০ কেজি খাবার খায়। যেখানে বাজারে বহুল প্রচলিত অনেক মুরগির এই ওজনে আসতে প্রায় ৯০ দিন লেগে যায়।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল জলিল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এমসিটিসি মুরগির জাতটিকে আমরা বলে থাকি, দেশীয় ব্রয়লার। সরকারি চারটা ফার্ম এবং প্রাইভেট দুইটা ফার্মের মাধ্যমে আমরা পুরো বাংলাদেশকে কাভার করার চেষ্টা করছি। পরবর্তী সময়ে চাহিদার ওপর ভিত্তি করে আরও অন্যান্য এলাকায় এর কার্যক্রম পরিচালনা করবো। এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কার্যক্রমটি পরিচালনা করবে।’

মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘‘মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ধারাবাহিক গবেষণার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে উৎপাদন, অভিযোজন ক্ষমতা, মৃত্যুহার, রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাব ইতোমধ্যে মূল্যায়ন করা হয়েছে। বাণিজ্যিক খামার পর্যায়ে মূল্যায়ন ও সম্প্রসারণের জন্য প্রথমে ‘আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেড কোম্পানি’র সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় এবং তাদের সঙ্গে যৌথ গবেষণা এখনও চলমান রয়েছে। খামার পর্যায়ে সম্প্রসারণ সফলভাবে করতে পারলে একদিকে স্বল্পমূল্যে প্রান্তিক খামারিরা অধিক মাংস উৎপাদনকারী জাতের বাচ্চা পাবেন। অন্যদিকে, আমদানি নির্ভরশীলতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। একইসঙ্গে মুরগির বাচ্চা ও মাংসের বাজার মূল্যের উত্থান-পতন নিয়ন্ত্রণ করা এবং দেশের সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় প্রাণিজ আমিষসহ অন্যান্য পুষ্টির চাহিদা পূরণে এ জাতের মুরগি ভূমিকা রাখবে।’’

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১