পরিত্যক্ত ডোবায় যেসব মাছ চাষ করে লাভবান হবেন

1146

Untitled-1-copy-1807101045
দেশের পরিত্যক্ত ডোবায় মাছ বিদেশি প্রজাতির দ্রুতবর্ধনশীল মাছ যেমন সিলভারকার্প, গ্রাসকার্প, মিররকার্প, নাইলোটিকা ও থাই সরপুঁটি (রাজপুঁটি) চাষের পরামর্শ দিয়ে থাকেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা।

এ মাছগুলো দ্রুতবর্ধনশীল ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যেই এগুলো বাজারজাত করার মতো পরিপুষ্টতা অর্জন করে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ এ মাছ চাষের জন্য খুবই অনুকূল। এছাড়া তুলনামূলক স্বল্প খরচে ও সহজ ব্যবস্থাপনায় চাষ করাও সম্ভব।

আধুনিক প্রযুক্তি সমন্বিত সুষ্ঠু চাষ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হলে স্বল্পায়তনের এসব পুকুর-ডোবায় চাষকৃত গ্রাসকার্প ও মিররকার্প অনধিক চার-পাঁচ মাসের মধ্যে গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম এবং থাইসরপুঁটি (রাজপুঁটি) ২০০ গ্রাম ওজনে উন্নীত হয়ে থাকে।

এসব পুকুর-ডোবায় পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় মাছ চাষ করে প্রতি শতাংশে উৎপাদন খরচ সর্বোচ্চ ১২০ টাকার বিনিময়ে ৩০০ টাকার মতো আয় করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে খরচ বাদে প্রতি শতাংশে প্রকৃত আয় থাকবে সর্বনিম্নে ১৮০ টাকা।

নিম্নে এ প্রজাতির মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হলো-

পুকুরের আয়তন ৫ থেকে ৪০ শতাংশ হতে পারে। এ ধরনের পুকুরের গভীরতা সাধারণত সাড়ে চার থেকে ৬ ফুট হয়ে থাকে। পোনা ছাড়ার আগে পুকুর নিয়মমাফিক প্রস্তুত করে নিতে হয়।

প্রথমেই পুকুরের পাড় মেরামত, অবাঞ্ছিত আগাছা পরিষ্কার ও রাক্ষুসে মাছ অপসারণ প্রয়োজন। শুকনো মৌসুমে পুকুরের তলার মাটি লবণ দিয়ে কর্ষণ করে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হয়। চুন প্রয়োগে পুকুরের তলার বিষাক্ত গ্যাস দূরীভূত হয়, উপরন্তু পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াও হয় ত্বরান্বিত। চুন প্রয়োগের সাত দিন পর প্রতি শতাংশে ৪ কেজি গোবর, ১৫০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা উত্তম।

প্রস্তুতকৃত পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য মজুদ আছে এ নিশ্চয়তা পাওয়ার সাথে সাথে প্রতি শতাংশে ১.৫ ইঞ্চি থেকে ২ ইঞ্চি আকারের ৪০ থেকে ৫০টি উপরোক্ত যে কোনো প্রজাতির পোনা ছাড়া যেতে পারে।

মাছের খাদ্য সরবরাহ:

পুকুরে যে পরিমাণ মাছ আছে তার সর্বমোট ওজনের শতকরা ৪ থেকে ৬ ভাগ হারে চালের কুঁড়া কিংবা গমের ভুসি সম্পূরক খাদ্য হিসাবে প্রতিদিন সকালে ও বিকালে দুইবার ছিটিয়ে দিতে হবে। প্রতি মাসে একবার জাল টেনে মাছের গড় ওজন নির্ধারণ করে খাবারের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ানো বাঞ্ছনীয়।

পুকুরে খাবারের ঘাটতি দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতি শতাংশে ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম টিএসপি এবং ওই পরিমাণ ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। গ্রাসকার্প ও থাইসরপুঁটি সাধারণত নরম ঘাস ও সবুজ উদ্ভিদ খেতে পছন্দ করে তাই এদের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদেপানা টোপাপানা, নেপিয়ার ঘাস ও কলাপাতা ইত্যাদি প্রতিদিন সামান্য পরিমাণে হলেও সরবরাহ করা গেলে মাছের আনুপাতিক উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে সন্তোষজনকভাবে। গ্রাসকার্প জলজ আগাছাকে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করায় কচুরিপানা বা অন্যান্য জলজ আগাছা এখন আর কোনো অবাঞ্ছিত উপকরণ নয় বরং মাছের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৯জানু২০২০