পেয়ারা ডাল বাঁকালেই ফলন হবে দশগুণ

934

বর্ষাকালের অন্যতম জনপ্রিয় ফল পেয়ারা। আমাদের দেশে ফলটির চাহিদা অনেক। দীর্ঘ ২৭ মাস গবেষণার পর সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে তথ্য দিলেন বাউকুল উদ্ভাবক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এম.এ. রহিম।

পেয়ারা ডাল বাঁকালেই ফলন হবে দশগুণ। তাছাড়া একই প্রযুক্তিতে বছরের বার মাসই ফল ধরানো সম্ভব। ফলের মৌসুমে গাছের ফুল ছিড়ে দিয়ে এ প্রক্রিয়াকে আরো প্রভাবিত করা যায়, যার ফলে সারা বছরই ফলের মৌসুমের তুলনায় কমপক্ষে আট থেকে দশগুণ ফল ধরবে গাছে।
উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্পর্কে ড. রহিম জানান, সাধারণত বর্ষা ও শীত ঋতুতে গাছে পেয়ারা হয়। তবে শীত অপেক্ষা বর্ষাকালে ফলন একটু বেশি হয়। বর্ষাকালে জলীয়ভাব বেশি থাকায় ফলের মিষ্টতা ও অন্যান্য গুণাগুণ শীতকালের ফলের থেকে অনেকাংশেই কম থাকে। তাছাড়া জলীয়ভাব বেশি থাকায় পাকা ফল তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে দাম থাকে কম। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেছে সকল জাতের পেয়ারার গুণাগুণ শীতকালে বেড়ে যায়, রোগ ও পোকার আক্রমণও কম থাকে। ফলের আকৃতি এবং রঙ সবদিক থেকেই সুন্দর হওয়ায় এই সময়ে পেয়ারার দামও থাকে বেশি। এসব দিক বিবেচনায় রেখেই বর্ষাকাল বাদে কীভাবে অন্যান্য ঋতুতে অত্যাধিক হারে উৎপাদন বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে গবেষণা শুরু হয়। এ লক্ষ্যে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গবেষণার মাধ্যমে ‘গাছের ডাল বাঁকানো’ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে প্রতিটি গাছ থেকে সাধারণ গাছের তুলনায় কমপক্ষে আট থেকে দশগুণ বেশি পেয়ারা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।

এছাড়াও পেয়ারার মৌসুমে গাছের ফুল ও ফল ছিড়ে দিয়ে এ প্রক্রিয়াকে আরো প্রভাবিত করা যায় বলে জানান তিনি। এ সম্পর্কে বাকৃবির জার্মপ্লাজম সেন্টারের প্রধান গবেষণা সহযোগী কৃষিবিদ শামসুল আলম মিঠু বলেন, বছরে দু’বার অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে এবং হেমন্তকালে শাখা-প্রশাখার নিয়ন্ত্রিত বিন্যাসের মাধ্যমে সারা বছর পেয়ারার ফুল ও ফল ধারণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। গাছের বয়স দেড় থেকে দু’বছর হলেই এই পদ্ধতি শুরু করা যাবে এবং পাঁচ থেকে ছয় বছর পর্যন্ত এই পদ্ধতিতে ফলন বাড়ানো সম্ভব।

ডাল বাঁকানোর ১০ থেকে ১৫ দিন আগে গাছের গোড়ায় সার ও পানি দেওয়া হয়। ডাল বাঁকানোর সময় প্রতিটি শাখার অগ্রভাগের প্রায় এক থেকে দেড় ফুট অঞ্চলের পাতা ও ফুল-ফল রেখে বাকি অংশ ছেটে দেওয়া হয়। এরপর ডালগুলোকে সুতা দিয়ে বেঁধে তা বাঁকিয়ে মাটির কাছাকাছি করে সাথে অথবা খুঁটির মাধ্যমে মাটিতে বেঁধে দেওয়া হয়। গ্রীষ্মকালে মাত্র দশ থেকে বার দিন পরেই নতুন ডাল গজানো শুরু হয়। নতুন ডাল ১ সে.মি. লম্বা হলে বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। আর হেমন্তকালে নতুন ডাল গজাতে বিশ থেকে পঁচিশ দিন সময় লাগে। ডাল বাঁকানোর ৪৫ থেকে ৬০ দিন পরে ফুল ধরা শুরু হয়। এভাবে গজানো প্রায় প্রতি পাতার কোলেই ফুল আসে। এ পদ্ধতিতে সারা বছরই ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া ফলের মিষ্টতা বেশি এবং রঙ আকৃতি সুন্দর হওয়ায় পেয়ারার বাজার দরও বেশি পাওয়া যায়।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৪জুন২০