ফকিরার চরে বিষমুক্ত সবজি আবাদে কৃষকের বিপ্লব

86

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়াসহ চার উপজেলার মোহনা সাঙ্গু নদীর তীর। এ দীর্ঘ তিন কিলোমিটার তীরবর্তী চর এলাকাটি আনোয়ারা উপজেলার সবজির প্রাণ কেন্দ্র ফকিরার চর নামেও পরিচিত। ফকির হাটের মিয়া হাজী দৌলতের মাজারসংলগ্ন বিস্তৃত মাঠজুড়ে কৃষকরা উৎপাদন করে নানা ধরনের সবজি। গত বছর সবজি রোপণের মৌসুমে ভারতের ওড়িশায় আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে শীতকালীন সবজি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে ফকিরার চরের শত শত কৃষকের। তবে এ বছর বিস্তৃত এইচর এলাকায় সবজি উৎপাদনে হয়েছে কৃষকের বিপ্লব।

বিশেষ করে আধুনিক প্রযুক্তি, সময়োপযোগী কৃষিনীতি ও কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এখানে সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে বলে মনে করেন কৃষিবিদরা। বিশেষ করে সিম, টমেটো, বেগুন, কপি ও বিদেশি কয়েকটি সবজি উৎপাদনে বাজিমাত করেছে কৃষকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক সময়ের ফকিরার চর বর্তামানে সাঙ্গুর ভাঙনে এখন নদীর দুপারে চর এলাকা সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষার শেষের সময় থেকে এখানে শুরু হয়েছে আগাম শীতকালীন সবজি উৎপাদন। বর্ষার বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে চরে শুরু হয়েছে সবজি চাষ। তবে দক্ষিণে জেগে ওঠা চরের জমিতে এ সবজি চাষ করা হচ্ছে বেশি। এ সবজি স্থানীয়ভাবে চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে চট্টগ্রাম শহরের বড় বড় কাঁচাবাজারগুলোতে।

এ চরের মধ্যে সবজি উৎপাদনকারী অধিকাংশ কৃষক হচ্ছে হাইলধর ও ইছাখালী গ্রামের। এখানকার কৃষকরা এখানে উৎপাদন করে আলু, বেগুন, সিম, টমেটো, কফি, মুলা, মিষ্টিকুমড়া, লাউ, সরিষা আর ব্যাপকভাবে হয় চীনাবাদাম। এছাড়া গ্রীষ্মকালীন সবজিও হয়।

চর অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে কীটনাশক ব্যবহার না করে পোকা দমনে অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করছে ফকিরার চরের কৃষকরা। পোকা দমনে অতীতে কৃষকরা ব্যবহার করত হরেকরকম কীটনাশক। বর্তমানে বাজারে কীটনাশকের দাম চড়া মূল্য, অপরদিকে জমিতে পড়ছে কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব। সাম্প্রতিক সময়ে দিয়েছে কৃষকরা নতুন এই কৌশলের মাধ্যমে পোকা দমন করছে। যা পেরিওম্যান ফাঁদ হিসেবে পরিচিত। এ ফাঁদ ব্যবহার করে পোকা দমনে তারা আশানুরূপ সাফল্যও পেয়েছে।

ইছাখালী গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ কাসেম জানান, এক কানি জমিতে বেগুন চাষ করলে খরচ হয় ১৫-২০ হাজার টাকা। আর সঠিকভাবে উৎপাদিত হলে প্রায় ২ থেকে আড়াইশ’ মণ বেগুন হয়। এতে প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভ আসে। এ বছর সবজির দাম বেশি পাওয়ায় অনেক কৃষকের ভাগ্য বদলে গেছে। এবার মিষ্টিকুমড়া ছাড়া অন্য সব সবজিতে ফলন বেশ ভালো হয়েছে।

মাহমুদ নামের আরেক কৃষক বলেন, কৃষি কর্মকর্তারা সবসময় খবরাখবর নেন। এখানে বেশ কিছু প্রদর্শনী দিয়েছেন। যে প্রদর্শনীগুলো দেখে বাকি কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ফলে চরের দক্ষিণ পাড়ে চীনাবাদামে কয়েক বছর ধরে বেশ সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। এই বছরও অন্যান্য সবজির মতো আমি দেড় কানি জমিতে চীনাবাদামের চাষ করেছি।

সবজির ফলন নিয়ে এখানকার অন্য কৃষকরা বলেন, বর্তমানে সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও এখানকার চরঞ্চলের সবজি উৎপাদন হয় এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে। যার ফলে একদিকে উৎপাদনে খরচ ও সময় কমেছে অন্য দিকে রোগবালাই থেকে ফসল রক্ষা করা সহজ হয়েছে। ফলে চাষ করে লাভবান হচ্ছেন এখানকার চাষিরা।

এ বিষয়ে কথা হয় হাইলধর ফিয়াক সেন্টারের পরিচালক, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আকাশ দাশের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই চরের জমি খুবই উর্বর। এ চরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যেকোনো ফসল বেশি হয়। এখানকার কৃষকরা প্রযুক্তি বুঝে। তবে গত কয়েক বছর ধরে সাঙ্গু নদীর দুই চরে সবজি উৎপাদনে নীরব বিপ্লব ঘটছে। উপজেলার সমতল এলাকায় যে পরিমাণ সবজি চাষ হয়, তার চেয়ে বেশি সবজি হয় হাইলধর ইউনিয়নের ফকিরার চরে। আমরাও কৃষি বিভাগ সবজির এই প্রাণকেন্দ্র নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা নিয়ে থাকি। সেই অনুযায়ী কৃষকদের নিয়ে কাজ করে থাকি।