বাজেরিগার পাখি পালন,পরিচর্যা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা

657

বাজেরিগার পাখি পালন, পরিচর্যা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা

বাজেরিগার পাখি (Melopsittacus undulatus) সাধারন প্যারাকিট গোত্রের পাখি। এদের আকৃতি ছোট, লম্বা লেজ বিশিষ্ট, দানাদার খাদ্য গ্রহণকারী টিয়া জাতীয় পাখি।এরা মূলত অস্ট্রেলিয়ার পাখি হলেও এখন গোটা বিশ্বে খাঁচায় পালিত হচ্ছে।

১৮০৫ সালে পাখি টি প্রথম সনাক্ত করা হয় এবং এই পাখিটি বিশ্বে ৩য় পোষা প্রাণি হিসেবে স্বীকৃত।

এরা এমনিতেই ঠক ঠক শব্দ করে,কামড় দেয়।এদের পিনিয়াল গ্নথি আছে।

গঠন:

এরা বিভিন্ন রং এর হয়।লম্বায় ৭ ইঞ্চি,গড় ওজন ৩০-৪০ গ্রাম সর্বোচ্চ ৮০-১০০গ্রাম।লেজ প্রায় ৩০ সে. মি. লম্বা।১মাসের মধ্যে বাচ্চায় পালক উঠে.৪৫দিনে উড়তে পারে।

বাসস্থান:

বাজেরিগার পাখি মূলত গাছের ডালে ঘর করতে পছন্দ করে বন্য পরিবেশে।কিন্তু পোষা পাখি হিসেবে এর জন্য ভাল পরিবেশ দরকার।খাঁচার আকৃতি ২৪*২৪*১৮ ইঞ্চি হতে হবে। ভেতরে একটি খাদ্য পাত্র ও একটি পানির পাত্র দিতে হবে। ডিম পাড়ার জন্য ও বাচ্চা ফুটানোর জন্য মাটির হাঁড়ি প্রদান করতে হবে।খাচায় ট্রে দিতে হবে এবং ট্রের উপর পেপার দিতে হবে।এতে ট্রে থেকে পেপার সহ বিস্টা দূর করা সহজ হয়।এদেরকে জোড়া মিলিয়ে রাখতে হয় ,জোড়া মিলাতে ৩০-৬০ মিনিট লাগে।

ব্রিডিং:

এরা গড়ে ৬-৮ টি ডিম দেয়।৮ মাস বয়সে পরিপূর্ণ যৌবন প্রাপ্ত হয়। সাধারনত মেয়ে পাখি ডিমে তা দেয় এবং রাতে হাঁড়ি থেকে বের হয় না। এদেরকে ডিম দেওয়ার জন্য মাটির হাঁড়ি প্রদান করতে হয়।বাচ্চা ফুটতে ১৮-১৯দিন লাগে।

খাদ্য:

চিনা, কাউন,সূর্যমুখী বীজ, মিলেট, গুজি তিল, তিশি, পোলাওর ধানসহ বিভিন্ন উপকরণ খাওয়ানো যায়।এর পাশাপাশি শাক সবজি ও এদের প্রিয় খাবার- শাক, গাজর,ফল ইত্যাদি খাওয়ানো যায়।২০-৩০ গ্রাম খাবার খায়।ডাল সিদ্ধ করে দিতে হবে।

ডিম ২-৩দিন,সব্জি ১-২দিন.২-৩বার প্রিস্কার পানি দিতে হবে।বাচ্চাকে হ্যান্ড ফিডিং করাতে হয়।

খাবারে এনার্জি ১২০০-১৩০০ কিলোক্যালরি, ডিম পাড়ার সময় প্রোটিন ১৫-১৬%, গ্রোয়িং পিরিয়ডে ১৮-১৯% ।

পরিচর্যা:

বাজেরিগার পাখি খুব ঐ আন্তরিক পাখি।এদেরকে প্রতিদিন দুইবার করে পানি ও খাদ্য প্রদান করতে হবে।পায়খানা দুই দিন পরপর পরিষ্কার করতে হবে।প্রতিদিন দুইবার করে জীবানুনাশক ছিটাতে হবে।খাচায় সিড়ি বা দোলনা দিলে দেয়া ভাল কারণ এরা জঙ্গলে ছিল উড়াউড়ি করতো।খাচায় যেহেতু সুযোগ কম তাই দোলনা দিলে কিছুটা উড়তে পারে।ডেটল বা স্যাভ লন দিয়ে স্প্রে করা যাবে না।

গরমে ১০ দিন আর শীতে ১৫ দিন পর পর গোসল করার জন্য পটে পানি দিতে হবে।

শীত কাল খুবই রিক্সি কারণ এরা গরম দেশের পাখি।

ফিশ অয়েল খাওয়ালে পালক চকচকে হবে।

লাইটিং ও তাপমাত্রা

২৪ ঘণ্টা লাইট দিতে হয় অন্ধকার হলে অনেক শব্দ করে।তাপমাত্রা ৩০ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট রাখা ভএল।

সেক্সিংঃ

হলুদ কালারের গুলো ফিমেল।

লাভ বার্ড ও ম্যাকাও ডি এন এ সেক্সিং করতে হয়।

কৃমিনাশক প্রদান:

পাখিকে ৩ মাস বয়সে প্রথম কৃমিনাশক ঔষধ প্রদান করতে হবে। এবং প্রতি ৩ মাস পরপর কৃমিনাশক ঔষধ প্রদান করতে হবে।

এসিম্যাক ১%
রোগবালাই প্রতিরোধ ও প্রতিকার:

বাজেরিগার পাখি বিভিন্ন ধরনের রোগ হয় যেমন: রানিক্ষেত, সালমোনেলসিস, কলেরা, টাইফয়েড, সিটাকোসিস, বিক এন্ড ফিদার রোগ ইত্যাদি। এই সমস্ত রোগ থেকে বাঁচার উপায় হলো খামারের ভাল পরিচর্যা করা। অসুস্থ হলে দ্রুত ভেটেরিনারিয়ানের কাছে নিয়ে যাওয়া।

ডা মোঃ শাহীন মিয়া
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা
বিসিএস প্রাণিসম্পদ।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১১নভেম্বর২০২০