বায়োফ্লক পদ্ধতিতে পানি ব্যবস্থাপনা ও ফ্লক তৈরী করার কলাকৌশল সম্পাদনা

1882

বায়োফ্লকে মাছ চাষের জন্য পানি ব্যবস্থাপনা ও ফ্লক একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। যেকোন মাছ বা চিংড়ি চাষ বা বায়োফ্লক প্রজেক্ট করার আগে পানির উৎস কি হবে এবং তার গুণাগুণ বা ব্যবহারের উপযোগীতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা জরুরী।

পানির উৎসঃ গভীর নলকূপ, সমূদ্র, নদী, বড় জলাশয়,লেক,বৃষ্টি ইত্যাদির উৎসের পানি গুণ মান ভাল থাকলে ব্যবহার করা যায়।

বায়োফ্লকের জন্য উপযোগী পানি তৈরীঃ

প্রথমে ট্যাংক ব্লিচিং পাউডার দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। এর পর নির্বাচিত পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করে পানি প্রবেশ করাতে হবে।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে পানির গুণাবলীঃ ১. তাপমাত্রা – ২৫ – ৩০ °C

২. পানির রং – সবুজ, হালকা সবুজ, বাদামী।

৩. দ্রবীভূত অক্সিজেন – ৭- ৮ mg/L

৪. পিএইচ – ৭.৫ – ৮.৫

৫. ক্ষারত্ব – ৫০ – ১২০ mg/L

৬. খরতা – ৬০ – ১৫০ mg/ L

৭. ক্যালসিয়াম – ৪ – ১৬০ mg/L

৮. অ্যামোনিয়া – ০.০১ mg/L

৯. নাইট্রাইট – ০.১ – ০.২ mg/L

১০. নাইট্রেট – ০ – ৩ mg/L

১১. ফসফরাস – ০.১ – ৩ mg/L

১২. H2S – ০.০১ mg/ L

১৩. আয়রন – ০.১ – ০.২ mg/L

১৪. পানির স্বচ্ছতা – ২৫ – ৩৫ সে.মি.

১৫. পানির গভীরতা – ৩ – ৪ ফুট

১৬. ফলকের ঘনত্ব – ৩০০ গ্রাম / টন

১৭.TDS – ১৪০০০ – ১৮০০০ mg/L

১৮. লবণাক্ততা – ৩ – ৫ ppt

পানিতে ফ্লক তৈরিঃ– প্রথম ডোজে ৫ ppm প্রেবায়োটিক, ৫০ ppm চিটাগুড়, ৫ ppm ইস্ট, পানি প্রতি টনের জন্য ১ লিটার, একটি প্লাস্টিকের বালতিতে অক্সিজেন সরবরাহ করে ৮- ১০ ঘণ্টা কালচার করে প্রয়োগ করতে হবে। ২য় দিন থেকে ১ppm প্রোবায়োটিক, ৫ ppm চিটাগুড়, ১ ppm ইস্ট, প্রতি টনের জন্য ১ লিটার পানি দিয়ে উপরের সময় ও নিয়মে কালচার করে প্রতি দিন প্রয়োগ করতে হবে।

বায়োফ্লকের এক্টিভিটি পর্যবেক্ষণঃ

পানিতে যথাযথ পরিমাণ ফ্লক তৈরি হলে-

১. পানির রং সবুজ বা বাদামী দেখায়।

২. পানিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ কণা দেখা যায়।

৩. পানির অ্যামোনিয়া পরীক্ষা করলে পানি অ্যামোনিয়া মুক্ত দেখায়।

৪. প্রতি লিটার পানিতে ০.৩ গ্রাম ফ্লকের ঘনত্ব পাওয়া যাবে।

৫. ক্ষুদিপানা দেওয়ার পর তাদের বংশ বিস্তার পরিলক্ষিত হয়।

ট্যাংক নির্মাণ: প্রথমে গ্রেড রড দিয়ে ট্যাংকের বৃত্তাকার খাঁচাটি তৈরি করতে হবে। যেই স্থানে ট্যাংকটি স্থাপন করা হবে সেই জায়গাতে খাঁচার পরিধির সমান করে সিসি ঢালাই দিতে হবে। বৃত্তের ঠিক কেন্দ্রে পানির একটি আউটলেট পাইপ স্থাপন করতে হবে। এরপর খাঁচাটিকে ঢালাই মেঝের উপর স্থাপন করে মাটিতে গেঁথে দিতে হবে। মেঝের মাটি শক্ত ও সমান হলে ঢালাইয়ের পরিবর্তে পরিধির সমান করে পুরু পলিথিন বিছিয়েও মেঝে প্রস্তুত করা যায়। এরপর উন্নতমানের তারপুলিন দিয়ে সম্পূর্ণ খাঁচাটি ঢেকে দিতে হবে। তার উপর পুরু পলিথিন দিয়ে আচ্ছাদিত করে তাতে পানি মজুদ করতে হবে।

এরেটর পাম্পঃ বায়োফ্লক ট্যাংকে সার্বক্ষণিক অক্সিজেন সাপ্লাই দেওয়ার জন্য একটি এরেটর পাম্প স্থাপন করতে হবে। ছয় ফুট ব্যাসার্ধের এবং চার ফুট উচ্চতার একটি ট্যাংকে প্রায় ত্রিশ হাজার শিং মাছ চাষ করা যাবে।

বায়োফ্লক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ চাষের ক্ষেত্রে যে সকল বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে:
উপকারী ব্যাকটেরিয়ার উৎস: বায়োফ্লকপদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা মাছচাষের ফলে উৎপাদিত বর্জ্য কে প্রোটিন সমৃদ্ধ জৈব খাবারে তৈরি করে। তাই সঠিক উৎস হতে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া সংগ্রহ করতে হবে।

নিয়মিত পানির গুণাগুণ পরীক্ষা: নিয়মিত ট্যাংকে সরবরাহকৃত পানির গুণাগুণ যেমন- অ্যামোনিয়া, নাইট্রেট, নাইট্রাইট, ফ্লকের ঘনত্ব ইত্যাদি পরিমাপ করতে হবে এবং এগুলো যদি সঠিক মাত্রায় না থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

তাপমাত্রার হ্রাস বৃদ্ধি: আমাদের দেশে দিনের বেলার তাপমাত্রা ও রাত্রের তাপমাত্রা সব সময় উঠানামা করে, যা ফ্লকের বৃদ্ধির জন্য উপযোগী নয়। তাই পর্যাপ্ত ফ্লকের বৃদ্ধির জন্য তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

কারিগরি জ্ঞান সমৃদ্ধ জনবল: বয়োফ্লকের মাধ্যমে মাছ চাষের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দক্ষ জনবলের প্রয়োজন। কারণ এই প্রযুক্তিতে যদি পানির গুণাগুণ পরীক্ষা, সঠিক মাত্রায় খাদ্য প্রয়োগ, ফ্লকের ঘনত্ব পরিমাপ ইত্যাদি বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান না থাকে তাহলে চাষি যে কোন সময় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ: বায়োফ্লক পদ্ধতিতে ট্যাংকে অধিক পরিমাণে মাছ রাখা হয়। তাই ট্যাংকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়। আর ট্যাংকে সব সময় অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ লাগবে। তা না হলে ট্যাংকের অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে সব মাছ এক সাথে মারা যেতে পারে। সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা ট্যাংকে অক্সিজেন সরবরাহ না করা হলে সব মাছ মারা যেতে পারে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৬সেপ্টেম্বর২০