বালুচরে মাছ চাষ করে চমক দেখিয়েছেন ঝিনাইদহের সাগর

330

বালুচরে মাছ চাষ
আরাফাতুজ্জামান, ঝিনাইদহ থেকে: “বর্ষার জল সরিয়া গিয়াছে জাগিয়া উঠিয়াছে চর, গাঙ শালিকেরা গর্ত খুঁড়িয়া বাঁধিয়াছে সবে ঘর।” নদীর চরে জেগে উঠা বালুচর এখন শুধু গাঙ শালিকের ঘরই না, তা মাছ চাষেও ব্যবহার করা যায়। চরে পলিথিন বিছিয়ে মাছ চাষ করে রীতিমতো সাড়া ফেলেছেন ঝিনাইদহের বেকার যুবক রাকিবুল ইসলাম সাগর। নদীর শুকনো বালুচরে তার মাছের চাষে বিস্মিত মানুষ। এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ চাষে বিপ্লব ঘটানো যেতে পারে বলছে মৎস্য অফিস।

ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার প্রত্যন্তপল্লি পুরাতন বাখরবা গ্রামের শিক্ষিত (বিএসএস) বেকার যুবক রাকিবুল ইসলাম সাগর। তার কর্মতৎপরতা দেখে প্রথমে পাগলই ভেবে ছিল অনেকে। কিন্তু মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে বড় বড় মাছ দেখে অনেক যুবকই তার পথে হাঁটছেন।

কাঁটাযুক্ত বাদে সব ধরনের মাছই এভাবে চাষ করা সম্ভব। এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ উৎপাদনে দেশকে অনেক ওপরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন সাগর। আর মৎস্য অফিস বলছে এটা রীতিমতো চমৎকার উদ্ভাবনী উদ্যোগ। যা কাজে লাগিয়ে দেশের মৎস্য চাষের বিপুল সম্ভাবনা তৈরি করা সম্ভব।

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় গড়াই নদীতে জেগে ওঠা ধুধু বালুচরে ছোট ছোট খালের মতো তৈরি জলাশয়গুলো দেখতে পাওয়া যায়। পুকুর, জলাশয় বা বড় কোনো জলাশয়ে যেমন মাছ বিচরণ করে, এখানেও তেমনই। আর তা দেখতে ভিড় করছে নদী পাড়ের মানুষেরা।

সাগর জানান, গত বছর একটি বেড তৈরি করে পাঁচ হাজার টাকার মাছ ছেড়ে দশ হাজার টাকায় বিক্রি করে ছিলেন মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে। আর এবার চারটি বেডে শুরু হয়েছে বালিতে মাছের এমন চাষ। ১০৫ ফুটের মতো দৈর্ঘ্য, ১৭-১৮ ফুট প্রস্থ আর দুই থেকে চার ফুট গভীর তাতেই বেড তৈরি করে পলিথিন বিছিয়ে দিয়ে শুরু করা যেতে পারে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ। নদীতে বর্ষাকালে পানি ভরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কমপক্ষে তিন মাস আর জেগে উঠা চরগুলোতে ৭ থেকে ৮ মাসের বেশি সময় এভাবে মাছ চাষ সম্ভব।

বালুচরে মাছ চাষ

তিনি জানান, ঠিক এভাবে বেকাররা দল বেঁধে দেশের চরে-ডুবো চরে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। তিনি আরো বলেন, পুকুর লিজ নিয়ে কই মাছের চাষ করেছিলেন। কিন্তু সেখানে লোকসানে পড়েন। হারিয়ে ফেলেন পুঁজি। তাই নতুন কোনো পদ্ধতি খুঁজতে থাকেন তিনি। মাছ চাষে দীর্ঘ পাঁচ বছরের বেশি সময় বাড়ির আশপাশে তিনি গবেষণা করেছেন। পুকুর বা জলাশয় লিজ নিয়ে চাষ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কিন্তু নদীর বালিয়াড়িতে মাছ চাষে তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। বড় ধরনের পুঁজি বা জমিও দরকার হয় না।

শৈলকুপা মৎস্য অফিসের মাঠ কর্মকর্তা সালাউদ্দিন জানান, এটা নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা। এ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে মাছ চাষে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। এই পদ্ধতিকে কাজে লাগাতে পারলে দেশের মৎস্য চাষের মোড় ঘুরে যেতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, শুধুমাত্র কিছু সম্পূরক খাদ্য দিয়ে জমি, পুকুর, জলাশয় বা বড় ধরনের বিনিয়োগ ছাড়াই এ প্রক্রিয়ায় মাছের চাষ খুবই লাভজনক করা সম্ভব।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন