ভালো মানের মুরগির বাচ্চা চেনার ৫ কৌশল

290

মুরগির খামারের সবচেয়ে বড় বিষয় বাচ্চা নির্বাচন। ভালো মানের অর্থ্যাৎ নিরোগ, সুস্থ্য ও আকারে পরিমিত না হলে খামারে লোকসান হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আসুন ভালো মানের মুরগির বাচ্চা চেনার ৫টি কৌশল বিষয়ে জানব:-

ভালো মানের বাচ্চা বা কোয়ালিটি চিকস বলতে উন্নত উৎপাদন সহায়ক বৈশিষ্টাবলী সম্পন্ন বাচ্চাকে বুঝায়। যেমন-

১. উচ্চ জেনেটিক পটেনশিয়ালিটি সম্পন্ন বাচ্চা, হাতে নিলে পরিচ্ছন্ন ও শুকনো মনে হবে।
২. নরম পালকে আচ্ছাদিত শরীর এবং যে কোন প্রকার ক্ষত ও দুষণমুক্ত, সচকিত চাহনী, পরিচ্ছন্ন ও উজ্জল চোখ, শারিরীক ত্রুটিমুক্ত।
৩. নাভী পরিস্কার শুকনা। কোন প্রকার মেমব্রেন ও কুসুম শরীরে লেগে থাকবে না।
৪. শরীর স্পর্শ করলে দৃঢ় অনুভূত হবে। কিন্তু হাতে ধরলে হাড়ের অস্তিত্ব বুঝা ঝাবেনা, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত ত্রুটিমুক্ত, পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রতি কৌতুহলী ও প্রতিক্রিয়াশীল হবে।
৫. ওজন হবে ডিমের প্রাথমিক ওজনের ৬৭-৭০%, যে বাচ্চার দেহের দৈর্ঘ্য বেশি তার উৎপাদন ক্ষমতা ভালো।

খামার স্থাপন বা মুরগি পালনের ক্ষেত্রে মুরগির বাচ্চা প্রধান উপাদান, তাই বাচ্চা ক্রয়ের সময় উল্লেখিত ভিজুয়েল স্কোরিং -এর অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো দেখতে হবে। তাছাড়া বাচ্চা ক্রয়ের সময় ঐসব বিষয়ের পাশাপাশি জেনে নিতে হবে একই বয়সের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো কিনা? খুব কম বয়সী (পুলেট) এবং বেশী বয়সের মুরগীর ডিমের বাচ্চা কিনা ইত্যাদি ।

দেশী মুরগির দ্বিগুণ বাচ্চা উৎপাদন কৌশল
পোল্ট্রি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: অনেকেই বাড়িতে দেশী মুরগির চাষ করতে চান। কিন্তু বাচ্চা উৎপাদনের সঠিক কৌশল না জানা থাকায় ব্যার্থ হন। আজ দেশী মুরগির দ্বিগুণ বাচ্চা উৎপাদন কৌশল বিষয়ে কিছু জেনে নেওয়া যাক।

দেশি মুরগি পালন সহজ করতে ছোট্ট একটি প্রযুক্তি হাজল। হাজল উৎপাদন করার নিয়ম হচ্ছে কাদা, খড় একসঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে।

উপরের মুখ ১৬ ইঞ্চি, নিচের মুখ ১০ ইঞ্চি, উচ্চতা ৯ ইঞ্চি। হাজলের উপর মুখে ২টি পাত্র থাকবে। একটিতে পানি ও অন্যটিতে খাবার থাকবে। হাজল তৈরির পর কুঁচে মুরগি নির্বাচন করার সময় মনে রাখতে হবে সমান আকারে ডিম নির্বাচন ও ৫-৭ দিনের ডিম নির্বাচন করতে হবে।

হাজলের নিচে ছাই ৩ ইঞ্চি দিতে হবে। ছাইয়ের ভিতরে একটি ন্যাপথোলিন চার ভাগের এক ভাগ দিতে হবে কারন ছাইয়ের মধ্য কোন পোকা মাকর না হতে পারে এবং নরম খড় দিতে হবে পরিমাণ মত। কুঁচে মুরগির ওজন অনুযায়ী ডিম অর্ধেক দিতে হবে। মুরগির ওজন ১ কেজি হলে ৫শ গ্রাম ডিম দিতে হবে (ডিমের পরিমাণ মুরগির ওজনের অর্ধেক)।

প্রতিদিন হাজলের পাত্রে পরিষ্কার পানি ও খাবার দিতে হবে। কুঁচে মুরগির জন্য খাবার ও পানির পাত্র থাকায় খাদ্যের সন্ধানে মুরগিকে বাহিরে যেতে হয়না। তাই মুরগির ওজন কমেনা এতে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ডিমে তা দেয়ায় ডিম ফোটার হার বেশী। হাজলে বসা মুরগীটি তাঁ দেয়ার সময় খাদ্যের সন্ধানে ১০/১৫ মিনিট সাজলের বাইরে থাকায় তাঁ দেয়া ডিম ঠান্ডা হওয়ার কারনে আশানুরুপ বাচ্চা ফোটে না বা দীর্ঘদিন একই যায়গায় অবস্থান করায় খাদ্য ও পানির অভাবে মুরগী দুর্বল হয়। এ নতুন পদ্ধতির সাজলটিতে খাদ্যের জন্য স্থান থাকায় পরিমান মতো খাদ্য গ্রহনের ফলে ডিম, বাচ্চা ও মা মুরগী ভাল থাকে।

উন্নত পদ্ধতিতে হাজলে মুরগি উৎপাদন সময় কাল থাকবে ২০ দিন। বাচ্চা আলাদাকরণের উপায় হচ্ছে শীতকালে মা মুরগি হতে বাচ্চা আলাদা করতে হবে ০-১৫ দিন পর এবং গরমকালে ০-১০ দিন পর।

আলাদকরণের সময় মা মুরগিকে অনেক দূরে রাখতে হবে। যাতে বাচ্চা মায়ের ডাক শুনতে না পায়। পরে বাচ্চা গুলোকে বাঁশের ঝুড়ির ভিতরে আবদ্ধ রাখতে হবে। এ সময় বাচ্চাকে ব্রয়লারের খাবার দিতে হবে। খাবার তৈরির নিয়ম হচ্ছে আটা পরিমাণ মত, চালের চিকন গুঁড়া পরিমাণ মত, এক চিমটি লবণ এবং পানি মিশিয়ে খাবার তৈরি করতে হবে।

মা মুরগি হতে বাচ্চা আলাদা করলে ১৫ থেকে ১ মাসের মধ্যে মুরগি পুনরায় ডিম দিবে। অথচ প্রচলিত পদ্ধতিতে দেশী মুরগির ডিম ফোটার ৮০-৮৫ দিন পর পূনরায় ডিমে আসে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, ডিম বেশি পাওয়া যাবে, বাচ্চা বেশি পাওয়া যাবে। বাচ্চা ফুটার পর যে কাজগুলো করতে হবে বাচ্চাকে ৩-৫ দিন পর ১ চোখে ১ ফোটা করে বিসিআরডিভি টিকা দিতে হবে।

তাই দেশি মুরগি পালনে উন্নত হাজল ব্যবহার এবং বাচ্চা আলাদা করন পদ্ধতি ব্যবহার করলে দেশী মুরগি থেকে বছরে যেখানে প্রচলিত পদ্ধতিতে মাত্র ৩ বার ডিম পাওয়া যেত সেখানে এই পদ্ধতিতে ৬-৭ বার ডিম পাওয়া সম্ভব। প্রযুক্তিটি দেশি মুরগির ডিম ও মাংসের যোগান বাড়াতে অসামান্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম পাশাপাশি কৃষকের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নেও অর্থবহ ভূমিকা রাখবে।

সূত্র: কর্ষণ

ফার্মসএন্ডফার্মার/২১মার্চ ২০২২