মুরগির টিকার সিডিউল যেসব বিষয়ের উপর নির্ভর করে

229

মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল অনেকগুলি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। স্থান কাল পাত্র ভেদে ভ্যাক্সিন সিডিউল পরিবর্তন হতে পারে। সাধারনত মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল যেসব বিষয়ের উপর লক্ষ রেখে তৈরি করা হয় তা এখানে দেয়া হলো।

লোকাল ডিজিজ বা আঞ্চলিক রোগ
যে এলাকায় যে রোগ হয় সেসব ভ্যাক্সিন দিতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের খামারীরা ভ্যাক্সিনের নাম শুনলেই দিতে চায় এবং দিয়ে থাকে। খামারীরা যদি ডাক্তারকে জিজ্ঞেস না করে ভ্যাক্সিন ম্যানদের কাছে জানতে চায় তাহলে বিপদে পড়বে কারণ বেশি ভ্যাক্সিন দেয়ার সুবিধার জন্য/না জানার জন্য ভ্যাক্সিনম্যানরা সব ভ্যাক্সিন দেয়ার জন্য বলবে।

দেশের অবস্থা মানে দেশে কি কি রোগ হচ্ছেঃ
একেক দেশে একেক রোগের প্রকোপ থাকতে পারে। যেমন আমাদের দেশে আগে বার্ড ফ্লু ভ্যাকসিন দেয়ার দরকার হতো না। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে বার্ড ফ্লু দেখা যায়। দেশে কোন নতুন ভাইরাস আসলে বা কোনোটি বিলুপ্ত হলে সেই মোতাবেক ভ্যাকসিন সিডিউল নির্ধারিত হয়ে থাকে।

সঠিক সময়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগঃ
কোন ভ্যাক্সিন কখন দিতে হবে তা জানা জরুরি। যেমন মেরেক্স টিকা হ্যাচারীতে দিতে হবে না দিলে পরে দিয়ে লাভ হবে না। কিন্তু আমাদের দেশে ৮০-৯০% খামারী ১০-১৪দিনে মেরেক্স টিকা করে থাকে। হ্যাচারীতে দিয়ে থাকলে পরে দেয়া তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু হ্যাচারী না দিলে পরে দিয়ে কাজ হবে না।

নিজের ফার্মের অবস্থাঃ
নিজের ফার্মে কি কি রোগ হয় তা বিবেচনা করে ভ্যাক্সিন দিতে হবে। যেমন, অনেক ফার্মে সালমোনেলা মাইকোপ্লাজমা বেশি মাত্রায় দেখা যায়। এক্ষেত্রে ভ্যাক্সিন করা জরুরি।

আশাপাশের ফার্মের অবস্থাঃ
আশে পাশের ফার্মে যে ভ্যাক্সিন দেয় সেগুলোও নিজের ফার্মে দেয়া লাগতে পারে। লাইভ ভ্যাক্সিন সমূহ দ্রুতই আশেপাশের ফার্মে ছড়িয়ে যেতে পারে।

সিজন বিবেচনা করতে হবেঃ
কিছু রোগ আছে যেগুলি সিজনে বেশি দেখা দেয়। সব রোগ সব সিজনে একই রকম থাকে না। যেমন এ আই, রানিক্ষেত, আই বি শীতে বেশি হয়। তাই শীতের রোগের গুরুত্ব দিয়ে ভ্যাক্সিন দিতে হবে।

ভ্যাকসিনের স্ট্রেইনের সাথে ফার্মের ভাইরাসের মিল আছে কিনাঃ
ভাইরাসের স্ট্রেইন অনেক গুরুত্বপূর্ন। একই ভাইরাসের বিভিন্ন স্ট্রেইন থাকতে পারে। তাই ভ্যাক্সিন দিলেই হবে না। ফার্মে যে ভাইরাসের স্ট্রেইন মিল থাকলে তবেই ভ্যাকসিন তার সঠিক কার্যকারীতা পাবে।

একেক জেলায় বা একেক দেশে বা একেক মহাদেশে একেক রোগ হয়ঃ
একেক দেশে একেক রোগের প্রকোম থাকে। যেমন উত্তর আমেরিকায় রিও ভাইরাসের টিকা জরুরি। আবার ইউরোপের অনেক দেশ নিউক্যাসল ডিজিস থেকে মুক্ত। রোগ থাকতে টিকা দিতে হবে। না থাকলে যদি টিকা দেয়া হয় তাহলে নতুন রোগের আমদানি হবে। পরে সব সময় সেই ভ্যাক্সিন দেয়া লাগতে পারে।

মুরগির জাত বা ব্রিডার অনুযায়ী ভ্যাকসিন সিডিউল হয়ঃ
ব্রিডার,লেয়ার,ব্রয়লার,সোনালি/কক,কালার বার্ড ইত্যাদি সবার ভ্যাক্সিন এক হবে না। জাত অনুযায়ী রোগ হয়ে থাকে। আবার রোগ অনুযায়ী ভ্যাক্সিন হয়। তাই এসব বিবেচনা করে টিকা দিতে হবে। তাছাড়া ব্যবস্থাপনাও আলাদা হয়।ব্রিডারে সবচেয়ে বেশি দেয়া হয় কারণ তাদের ব্যবস্থাপনা ভাল। তাছাড়া বাচ্চাতে যাতে ম্যাটার্নাল এন্টিবডি আসে সে দিকে খেয়াল রাখতে হয়।

হ্যাচারীতে কি কি টিকা দেয়া আছে তা জানতে হবেঃ
ব্রিডার কোম্পানীকে তাদের বাচ্চার ম্যাটার্নাল এন্টিবডি কত তা জানিয়ে দিতে হবে এবং কবে শেষ হবে তা বলে দিতে হবে। সেই অনুযায়ী ভ্যাক্সিন হবে। তখন গাম্বোরু বা রানিক্ষেতের ভ্যাক্সিন ফেইল হবার সম্বাবনা কমে যাবে।

নোটঃ
অনেক দেশেই এন্টিজেন এন্টিবডি কমপ্লেক্স বা ভেক্টর-মিউন ভ্যাক্সিন হ্যাচারীতে দিয়ে দেয় ফলে ফার্মে আর গাম্বোরুর টিকা দিতে হয় না। সাল্মোনেলা, মাইকোপ্লাজমা ভ্যাক্সিন কেন ১দিনে/১ম সপ্তাহে দেয়া হয়নাকারণ ১ম সপ্তাহে মেরেক্স,আই বি,রানিক্ষেত,আই বি ডি,এই ৪টি ভ্যাক্সিন করতে হয় ফলে ভ্যাক্সিন দেয়ার মত সময় পাওয়া যায় না,এসবের টাইটার উঠার জন্য অনেক প্রোটিন দরকার হয়।আরো ভ্যাক্সিন দিলে তা খুব ভাল কাজ করবে না।তাছাড়া ধকল বেশি পড়বে।তাছাড়া বাচ্চাতে সাম্লমোনেলা ও মাইকোপ্লাজমার লোড থাকায় ভ্যাক্সিন দিলেও তেমন কাজ হবে না।তাই প্রতি মাসে সাম্লোনেলা ও মাইকোপ্লাজমার ডোজ করে জীবাণূর লোড কমিয়ে তারপর সাল্মোনেলা বা মাইকোপ্লাজমার ডোজ করতে হয়।

তবে কিছু ভ্যাক্সিন আছে যেগুলো ১দিন বা ১ ম সপ্তাহে দেয়া যায় যা ভ্যাক্সিনের টেক্নোলজির উপর নির্ভর করে।

আমাদের দেশে খামারীরা সব টিকা দিতে চায় দরকার আছে কিনা তা জানতে চায় না। গাম্বোরু ভ্যাক্সিন কখন দিতে হবে তা কিসের উপর নির্ভর করেঃ

১।বাচ্চা কোম্পানী বাচ্চার ম্যাটার্নাল এন্টিবডি জানাতে হবে বা তাদের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। এমন কি কোম্পানী যদি না দেয় তাহলে বাচ্চা নেয়া বন্ধ করে দিতে হবে।.

২।ফার্ম মতুন না পুরান।ফার্মের গাম্বোরুর ইতিহাস।৩।ভ্যাক্সিন কোম্পানীর ভ্যাক্সিনের ধরণ ও সিডিউল।প্রতি কোম্পানীর ভ্যাক্সিনের টেকনোলজি একেক রকম তাই সিডিউল ও একেক রকম তাই কোম্পানীর সিডিউল মেনে দেয়া উচিত।তবে কোম্পাণির দায়িত্বশীল ব্যাক্তির কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।

ভ্যাক্সিন বিক্রির জন্য বা না জানার কারণে কেউ কেউ ভুল বলতে পারে।এন্টিবডি জানা না থাকলে ইন্টার্মেডিয়েট প্লাস ভ্যাক্সিন আগে দেয়া উচিত,ম্যাটার্নাল এন্টিবডি কবে শেষ হবেতা যদি জানা থাকে তাহলে ইন্টার্মেডিয়েট ভ্যাক্সিন।

ইন্টার্মেডিয়েট ভ্যাক্সিন গুলো নরমালী দেরিতে দেয়া হয় আর ইন্টার্মেডিয়েট ভ্যাক্সিন গুলো আগে দেয়া হয়।নরমালি ইন্টার্মেডিয়েট ভ্যাক্সিন ১০-১২দিনের পর হয় কারণ তখন এম ডি এ ১০০-২০০ হয়।(কোন টা আবার ৫০০-৭০০তে আসলে দিতে হয়)

– Dr.Shuhorab Hossain

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২