মুরগির শীতকালীন ব্যবস্থাপনা

709

পরিবেশের পরিবরতনের প্রভাব সকল জীবের মত মুরগির স্বাভাবিক জীবন প্রবাহ ও শারীরবৃত্তীয় কাজকর্মকে প্রভাবিত করে এবং এর সাথে সাথে তাদের সক্ষমতাকে প্রভাবিত করে.

শীতে তাপমাত্রা ৮-৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট হয়ে যায়।সাভাবিক হল ২১-২৪ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট।
এই সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকমে যায়।ডিম কমে যায়,এন্টিবডি দ্রুত কমে যায়।
শীতকালের জন্য যে ফিডের আলাদা ফরমুলা দরকার তা অনেকে মেনে চলে না ফলে বিভিন্ন সমস্যা হয়।
এই সময় লিটারের উচ্চতা ১-২ ইঞ্চি বাড়াতে হয়।
আদ্রতা কম থাকায় লিটারে ধূলাবালি বেশি হয় ফলে ঠান্ডা বেশি লাগে।
এমোনিয়া গ্যাস বেশি হবার কারণে রোগ বেশি হয়।

ব্রুডিং:
বাচ্চা মুরগির শরীরের তাপমাত্রা পরিবেশের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশি থাকে তাই পরিবেশর তাপমাত্রা দ্বারা মুরগির বাচ্চার দৈহিক তাপমাত্রা শোষিত হয়. এর ফলে বাচ্চার :শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কমে যায় এবং বাচ্চার মৃত্যসহ নানাবিধ জটিলতার সৃষ্টি হয়.
১২-২৪ ঘন্টা মুরগির জীবনে সবচেয়ে গুরুতপূরণ সময়।
কয়েকটি গুরুত্বপূন্ন বিষয় হল :
১. ব্রুডিং ব্যবস্থাপনা
২.হাউজ( বাসস্থান)
৩. ভেন্টিলেশন
৪. লিটার
৫. ফিডিং( খাবার)
৬. পানি
৭. হেলথ (সাস্থ)ব্যবস্তাপনা
৮. রোগ
১.ব্রুডিং:

ব্রুডিং ভাল হলে ৮০% সফলতা অজ্রিত হয়.শীতকালে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে গুরুত্ব বহন করে.
বাচ্চা আসার পূরবে ব্রুডার জালিয়ে তাপমাত্রা কাংখিত মাত্রায় রাখতে হবে.
বাচ্চার দৈহিক তাপমাত্রা নিয়ন্তনের জন্য লিটারের তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে।
১ সপ্তাহে ৯৫’ ফারেনহাইট
২ সপ্তাহে ৯০
৩য় ৮৫
৪থ ৮০
৫ম ৭৫
৬ষ্ঠ ৭০
আপেক্ষিক আদ্রতা
৭ দিন পুরবে ৪০ -৫০%
৭ দিন বয়সে ৫০-৬০%
১৪ দিনে ৬০-৭০%
লেয়ারের ব্রুডিং তাপমাত্রা বেশি লাগে মানে ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি আর আদ্রতা ও ১০% বেশি লাগে তাছাড়া ব্রুডিং ৭ দিন বেশি করতে হয়।
নরমাল বডি তাপমাতা ও লেয়ারের বেশি ১০৫ আর ব্রয়লারের ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
যদি আপেক্ষিক আদ্রতা উল্লেখিত পরিমানের চেয়ে কম বা বেশি হয় তাহলে ঘরের তাপমাত্রা ১’ ডিগ্রি কম বা বেশি হবে.
বায়োচলাচল বা ভেন্টিলেশনের কারনে তাপ মুরগির ঘরের সব জায়গায় সমভাবে ছড়াতে পারে এবং বাতাসের কোয়ালিটি ভাল থাকে.
অক্সিজেন। ১৯.৭%
কারবন ডাই অক্সাইডের ঘনত ৪০০ পিপি এম
কারবন মনোক্সইড এবং এমোনিয়া ১০ পিপি এম এর কম
ধুলাবালি ৩.৪ মি গ্রাম প্রতি ঘনমিটারে।
প্রথম ২৪ ঘন্টায় বাচ্চা তার ওজনের ২০-২৫% খাবার এবং ৪০-৫০% পানি খাবে.
৭ দিনে মৃত্যহার ১% বেশি হবেনা।
ব্রুডিং ভাল হলে (১৪দিন) ইউনিফর্মিটি ভাল হয়,

২. বাসস্থান:
ঘরটা পুরব – পশ্চিম হবে যাতে সূরযের আলো অধিক সময় ধরে তাপ দিতে পারে.
শীতকালে লেয়ারের ডিমপাড়া সাভাবিক রাখার জন্য পুরব পশ্রিম হল আরামদায়ক বাসস্থান.
বাহিরের ঠান্ডা বাতাস যাতে মুরগির সেডে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য পরদা,দরজা,ভেন্টিলেটর এবং অন্যান্য ছিদ্র ভালভাবে পরীক্ষা করতে হবে.
ঠান্ডাজনিত ধকলে মুরগির ডিম কমে যায় এবং মুরগি মারা যায় ও রোগপ্রতিরোধ কমে যায়.
ডিম পাড়া মুরগির ঘরের আপেক্ষিক আদ্রতা ৪০-৭০%,তাপমাত্রা ৬৫-৭০’।
উচ্চ তাপমাত্রার সাথে উচ্চ আদ্রতা মুরগির জন্য ক্ষতিকর, এর ফলে লিটার ভেজা ভেজা,ময়লা পালক,নোংরা ডিম,বিভিন্ন রোগ এবং এমোনিয়া গ্যাস তৈরি হয়.
ছাদে যাতে কোন ছিদ্র না থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে তাতে কুয়াশা পড়ে ঠান্ডা লাগতে পারে।
শীতকালে বাতাসের আদ্রতা কম থাকে বলে লিটারের আদ্রতা কমে শুষ্ক ধুলিময় হয় এবং এর ফলে চোখে সমস্যা,শাস প্রশাস জনিত সমস্যা,পালকের বৃদ্ধি কম,পালক ঠোকরানো ও ক্যানাবলিজম হয়.
লিটারের আদ্রতা সঠিক রাখার জন্য মাঝে মাঝে হাল্কাভাবে পানি স্পে করতে হবে.
মুরগি একটি ছোট পাখি কিন্তু এর মেটাবলিজম দ্রুত হয়, এ কারনে অন্য কোন বড় প্রানির তুলনায় মুরগির পা্র
ইউনিট অফ বডি সাইজ এর জন্য বেশি বাতাস দরকার.
আলোর তীব্রতা প্রতি বরগফুট জায়গার জন্য ০.২৫ ওয়াট.
ঘরের তাপমাত্রা যাতে ১৮-২৮ ডিগ্রি এর মধ্যে থাকে।
শীতকালে দিনের আলো কমে যায় তাই রাতে কৃত্রিম আলো দিয়ে ১৫-১৬ করা দরকার.

৩. ভেন্টিলেশন:
মুরগির ঘরে বায়ু চলাচলা করলে আদ্রতা ঠিক থাকে এবং বিষাক্ত গ্যাস বের হয়ে ভাল পরিবেশ নিশ্চিত করে.
শীতকালে মুরগির ঘরে ভেন্টিলেশনের বিষয়টি খুব গুরুত্ব পুন্ন্ কারন এ সময় মুরগির ঘরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন এবং ভেন্টিলেশন দুটি একসাথে ভাবতে হবে.
অতিরিক্ত বায়ু চলাচলের কারনে যাতে তাপমাত্রা কমে না যায় আবার তাপমাত্রা নিয়ন্তন করতে যেয়ে যাতে ভেন্টিলেশন বন্ধ হয়ে ঘরে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি না হয় এ বিষ য়টি খেয়াল রাখতে হবে.
সেডের চারদিকে চটের মোটা পরদা লাগাতে হবে এতে ভিতরে গরম থাকবে, বেশি শীত হলে কাপড়ের আরো একটি পরদা বাহিরে দেয়া যায়.তবে পরদা এমনভাবে সেট করতে হবে যাতে পরদা নিচ হতে উপরে তুলা যায়.
লিটারে যাতে গ্যাস না হয় প্রতি বরগফুট জায়গার জন্য ১ কেজি হারে এমোনিল পাউডার লিটারে দেয়া যায়.
আলো মুরগির দৈহিক বৃদ্ধি , যৌন পরিপক্কতা আনয়ন,ডিম উৎপাদন ইত্যাদিকে প্রভাবিত করে.

৪. লিটার:
লিটারে সব জায়গায় সমান তাপমাত্রা থাকতে হবে, লিটার ফ্লোর এবং মুরগির মাঝে ইনসুলেটর হিসেবে কাজ করে.
শীতকালে লিটার ৪-৬ ইঞ্চি করে দেয়া উচিত.গরমকালে ২-৩ইঞ্চি।
Drylit and Yuka ব্যবহার করা যায় যাতে এমোনিয়া কম তৈরি হয়,
ডারিলিট ১০০০ বরগফুটের জন্য ২৫০গ্রাম
ইউকা ১০ লিটার পানিতে ১গ্রাম দিয়ে খাওয়ানো যায় অথবা ৮০এম এল ১০০০ বরগফুট লিটারে লিটারে স্পে করা।
৫. খাবার:
শীতকালে কম তাপমাত্রায় এনারজি বেশি লাগে তাই ফ্যাট বা তেল বাড়াতে হবে.
তবে ভুট্রা এবং গম বেশি তাপ উৎপাদন করে তাই ভুট্রা এবং গম বেশি ভাল ফলে বেশি ক্যালরি তৈরি হয় যা মুরগির শরীর গরম রাখে.
শীতকালে মুরগি বেশি খায় কারণ তার শরীর গরম রাখার জন্য বেশি ক্যালরির দরকার.
বেশি খাবার খেলে খরচ বেড়ে যায় তাই ক্যালরি বাড়ানোর পাশাপাশি ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করতে হবে মানে ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা করতে হবে.
তাছাড়া শীতে অক্সিজেন বেশি লাগে.আমিষ বেশি দিলে পানি বেশি খাবে ফলে শরীর থেকে পানি বের হয়ে লিটার ভিজে যাবে এবং এমোনিয়া গ্যাস তৈরি হবে.

শীতকালে ডিম উৎপাদন ঠিক রাখতে হলে ডিম পাড়া মুরগির জন্য স্পেশালাইড রেশন (খাবার) দিতে হবে.
২১ডিগ্রি তাপমাত্রায় যদি ৩৪০কিলোক্যালরি প্রয়োজন হয়,তাহলে তাপমাত্রা ৩ডিগ্রি সেন্টিগেট কমে গেলে খাদ্যে অতিরিক্ত ১৫ কিলোক্যালরি যোগ করতে হবে।তাই ১৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ক্যালরি প্রয়োজন ৩৪০+১৫ঃ৩৫৫।
প্রডাকশন মুরগির জন্য বেশি প্রয়োজন কারণ বডি মেইন্টেইনের পাশাপাশি প্রডাকশন ঠিক রাখতে হয়।
শীতে খাবার কম গেলে খাবারে ভিটামিন মিনারেল বাড়িয়ে দিতে হবে।

৬. পানি:
পানির পাত্র বাড়াতে হয় কারন মুরগি ঠান্ডায় কম খেতে চায়.পারলে গরম পানি দেয়া যেতে পারে.
খাবারের দিগুন পানি খাওয়া উচিত, ডিম পাড়া মুরগির প্রায় ২৫০ এমএল পানি খাওয়া উচিত. ডিমে প্রায় ৭০-৭৫% পানি থাকে. পানি ও খাবারের ঘাটতি হলে ডিম পাড়া কমে যাবে,খোসার গুনাগুন ভালো হবে না,রোগ প্রতিরোধ কমে যায়.
পানিতে বিকালে এ ডিই৩ সপ্তাহে ২দিন দেয়া উচিত। খাবার কম খেলে ক্যালসিয়াম ,ফসফরাসের,এঞ্জাইম এর ঘাটতি হয়ে খোসা পাতলা হতে পারে।

ভিটামিন সি ও ই সপ্তাহে ২-৩দিন দিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল হয়।
শীতকালে ইকলাই বেশি হয় তাই পানিতে ক্লোরিন দেয়া যায়।

৭. রোগ:
লিটার ভিজে গেলে ব্যাক্টেরিয়াল ফারমেন্টেশনের মাধ্যমে এমোনিয়া গ্যাসের সৃষ্টি হয় ফলে চোখ দিয়ে পানি পড়ে,ক্ষত হতে পারে,নখ দিয়ে চোখ চুলকাতে পারে।
চোখ বন্ধ করে রাখে।
শাসতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয় ফলে রানিক্ষেত,কলিব্যাসিলোসিস,মাইকোপ্লাজমোসিস ও কক্সিডিওসিস বেশি হয়।
তছাড়া মাইকোপ্লাজমা,কলেরা,পক্স, ফাউল টাইফয়েড,এ আই,রানিক্ষেত,গাম্বোরু,পেঠে পানিজমা এবং নিউমোনিয়া এই রোগ গুলি শীতকালে বেশি হয়.

৮. হেলথ ব্যবস্তাপনা:
এই সময় ভিটামিন ই, সি,এ ডি ই,জিংক দেয়া এবং ৩৫-৪৫ দিন পর পর রানিক্ষেতের টিকা দেয়া, সুযোগ থাকলে টাইটার টেস্ট করা. এতে মুরগির ইমোনিটি বেড়ে যাবে.
বায়োসিকিউরিটি মেনে চলা এবং মুরগিকে ঠান্ডার ধকল থেকে রক্ষা করা.
পালক বদলানো মোল্টিং শীতকালে বেশি ঘটে যাতে ডিম কমে যায় কিন্তু খাবার বেড়ে যায় ফলে খামারির লস হয়,
কারন হল শীতে দিনের আলো কমে যায় এবং ধকল পড়ে.
এমোনিয়ার তীব্রতা কিভাবে কমানো যায়
লিটারের পি এইচ ৭ এর নিচে রাখা

লিটারের আদ্রতা(২১-২৫% ঠিক রাখার জন্য ১০% এলাম ব্যব হার করা যায় যাতে ব্যাক্টেরিয়াল ফারমেন্টেশন কম হয়।
এমোনিয়া গ্যাসের উপস্থিতি কিভাবে বুজা যায়
১০-১৫ পি পিএম হলে জাজালো কটু গন্ধ হয়।
২৫-৩৫ হলে চোখে ক্ষত হবে
৫০ হলে চোখে পানি ঝরবে ও ফুলে যাবে এবং ব্যথা হবে।
৭৫ হলে মাথা নাড়াচাড়া করবে।
১০০ হলে মারা যাবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০৭অক্টোবর২০