মুড়িকাটা পেঁয়াজের প্রভাবে কমেছে দাম

51

 

নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠতে শুরু করায় এবং ক্রেতারা পেঁয়াজ কেনা কমিয়ে দেয়ায় রাজধানীর বাজারগুলোয় কমতে শুরু করেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম। দুই দিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে পেঁয়াজের দাম কমেছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজের বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি মুড়িকাটা নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০, পুরান পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০, রাজশাহীর পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে।

এই একই বাজারে গত দুই দিন আগে প্রতি কেজি নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১৪০, পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ২০০, রাজশাহীর পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১৯৬ ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১৮০ টাকা দরে।

পেঁয়াজের দাম কমার কারণ জানতে চাইলে এক বিক্রেতা বলেন, বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। নতুন এই পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। এছাড়া পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্রেতারাও পেঁয়াজ কেনা কমিয়ে দিয়েছিলেন। পেঁয়াজ যেহেতু পচে যায়, বেশি দিন রাখা যায় নাÑপেঁয়াজের দাম কমার এটিও একটি কারণ।

পেঁয়াজের দাম কমায় ব্যবসায়ীদের লোকসান হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, দাম যখন বেশি ছিল তখন পেঁয়াজ কিনেছি। ক্রেতা না থাকায় সব বিক্রি করতে পারিনি। এখন দাম কমায় লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে। ১৮০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনে ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। লেবার খরচ দেয়ার পর প্রতি কেজিতে লোকসান হচ্ছে ৩০-৩২ টাকা।

আরেক বিক্রেতা বলেন, ১৮৮ টাকা করে পেঁয়াজ কিনে ১৭০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। লোকসান হলেও বিক্রি করতে হবে। নইলে নষ্ট হয়ে যাবে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসায় বাজারে দাম কমছে।

পেঁয়াজের দাম কমায় স্বস্তি প্রকাশ করলেও সন্তুষ্ট নন ক্রেতারা। তারা জানান, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০-৪০ টাকা হলে ভালো হতো। বাজারে প্রতিটি জিনিসেরই দাম বেশি।

এদিকে পেঁয়াজের নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়। মঙ্গলবার সকালেও কারওয়ান বাজারে অভিযান চালায় একটি টিম। এ সময় বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি, ক্রয়-বিক্রয়ের পাকা রশিদ দেখাতে না পারা ও দৃশ্যমান স্থানে মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করার অপরাধে তিন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযান শেষে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম বলেন, পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা মহানগরে ভোক্তা অধিদপ্তরের তিনটি টিম কাজ করছে। তারই অংশ হিসেবে আমি কারওয়ান বাজারে অভিযান পরিচালনা করলাম। এখানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে দেখলাম, তারা পেঁয়াজ কোথা থেকে নিয়ে আসছেন, কোথায় বিক্রি করছেন এ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করছেন না। মূল্যতালিকাও দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করছেন না। এজন্য তিন ব্যবসায়ীকে ১৫ হাজার করে মোট ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে বলে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যখন ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করল, তখন কোনো লেবার খরচ বাড়েনি। তারপরও অতি মুনাফার লোভে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের আমরা মনিটরিং করছি এবং আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এ সময় তিনি আগামী পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। সরবরাহও বেড়েছে। আশা করি বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

পেঁয়াজের বাজার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পর প্রতিদিন সারাদেশের বাজারে অভিযান পরিচালনা করে আসছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।