রংপুরে ৫০ লাখ ছাগল-ভেড়া পাবে পিপিআর টিকা

87

সকাল সাড়ে ৮টা, রংপুর সদরের হরিদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে দুই হাতে তিনটি ছাগল ধরে নিয়ে বসে আছেন পরিষদ ঘেঁষা হরিদেবপুর গ্রামের দিনমজুর সচীন চন্দ্র। অপেক্ষা বিনামূল্যে ছাগলের পিপিআর রোগের টিকা দেওয়ার। ছাগলগুলো সচীন চন্দ্রের চারপাশে ঘুরে মাঠের সবুজ ঘাস খাচ্ছে। সচীন চন্দ্র অধির আগ্রহে সামনে থাকা ক্যাম্পের দিকে তাকিয়ে আছেন কখন তার ডাক পড়ে।

কথা হলে সচীন চন্দ্র বলেন, ‘বাপু, কৃষাণ মানুষ। কাম করি যে টাকা পাই তাক দিয়া পেট চালায় দায়। এই ছাগল কোনা পুষি নিদানকালে বেচেয়া ঠেকা সারাই। কাইল মাইকোত শুনছি এটে ছাগলের রোগের টিকা দিবে, ওই জন্য সকালে ধরি আসছু। ছাগল টিকা দিয়া কামোত যাইম। টিকা পাইলো তো আর ছাগল মরবে না।’

সচীন চন্দ্র জানান, সঠিক সময়ে টিকা নিতে না পারায় গত বছর তার পোষা দুটি ছাগল পিপিআর রোগে মারা গেছে। তাই এবার পোষা ছাগলের টিকা নিতে সকাল থেকেই অপেক্ষা।

শুধু সচীন চন্দ্রই নয়; তার মতো শতাধিক মানুষ হরিদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে ছাগল ও ভেড়া নিয়ে শনিবার সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলেন পিপিআর রোগের টিকা নিতে।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) হরিদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে পিপিআর রোগ নির্মূল ও ক্ষুরা রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের সহযোগিতায় পিপিআর রোগের টিকা কার্যক্রমের ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. মো. আব্দুল হাই সরকার, রংপুর ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লতিফুর রহমান মিলন, জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার এনামুল হক, সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. রহমত আলী, হরিদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন।

রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরে পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের আট জেলায় ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৫০ লাখ ছাগল-ভেড়াকে পিপিআর টিকার আওতায় আনা হবে। এর মধ্যে রংপুর জেলায় ৭ লাখ ভেড়া ও ছাগল এ টিকা পাবে।

পিপিআর রোগে আক্রান্ত ছাগল-ভেড়ার শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করে অনেক বেড়ে যায়। ছাগলের নাক, মুখ, চোখ দিয়ে প্রথমে পাতলা তরল পদার্থ বের হয়। পরবর্তীতে তা ঘন ও হলুদ বর্ণ ধারণ করে। অনেক সময় অসুস্থ প্রাণীটির মধ্যে মারাত্মক রকমের ডাইরিয়া দেখা দিতে পারে। অসুস্থ প্রাণীটির ওজন হ্রাস পায়।

পিপিআর আক্রান্ত ছাগলে, অসুস্থ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। অসুস্থ হওয়ার ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে প্রাণীটি মারা যেতে পারে। পিপিআর রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে ২য় পর্যায়ের ব্যাকটেরিয়ার এবং পরজীবী সংক্রমণ রোধ করে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা যায়।

রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. মো. আব্দুল হাই সরকার বলেন, আমাদের অনেক সেবা আছে। কিন্তু জনবলের অভাবে প্রত্যন্ত এলাকায় সেভাবে পৌঁছাতে পারি না। ছাগল পালনকারীরা যদি এক হাত এগিয়ে আসেন, আমরা ১০ হাত বাড়িয়ে দেব। গরিবের একটি ছাগল একটি গরুর সমান। যার একটি ঘর সেও চৌকির নিচে ছাগল পালন করে। আর পিপিআর রোগ বেশি ছাগলেরই হয়। তাই পশু পালনকারীদের সচেতন থাকতে হবে, প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হব। ভাইরাসজনিত এসব রোগের নিয়মিত টিকা নিতে হবে।

সারাবছর আমাদের হাসপাতালগুলোতে পিপিআর রোগের টিকা পাওয়া যায়। যে কোনো সময় সেখানে টিকা নিতে পারেন। ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় প্রায় ৫০ লাখ টাকা ছাগল-ভেড়াকে টিকার আওতায় আনা হবে।