লালমনিরহাটে শ্যালক-দুলাভাইয়ের আগাম সবজি বিপ্লব

331

[metaslider id=”11477″]

নিয়াজ আহমেদ সিপন, লালমনিরহাট সংবাদদাতা: শ্যালক-দুলাভাই মিলে অন্যের জমি লিজ নিয়ে গত ৪/৫ বছর ধরে বিভিন্ন সবজি চাষ করে নিজেদের স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি জেলার অর্থনৈতিক উন্নতিতে ব্যাপক অবদান রাখছেন।

শিবরাম এলাকার সাড়ে তিন একর জমি বছরে ৭০ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে সারা বছর বিভিন্ন জাতে সবজি চাষ করছেন তারা। তাদের সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। ক্রয় করছে পাইকারি ক্রেতারা। তারা ট্রাকে করে নিয়ে যান এসব সবজি। তাদের শীতকালিন সবজি চাষ দেখে আগ্রহ বাড়ছে এ জেলায়। তারা হলেন-লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের শিবরাম এলাকার চাষি নুরল হক ও জহুরুল হক।

বৃষ্টি কম হওয়ায় উঁচু জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপন ও পরিচর্যায় ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষক পরিবারে। শুধু নিজেদের চাহিদার জন্য নয় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হচ্ছে সবজির। শীতের শুরুতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন জাতে সবজি পাঠাবে এ জেলার চাষিরা তার ব্যবস্থা করে শ্যালক ও দুলাভাইয়ের।

চাষিরা জানান, যেকোন ফসল আগাম চাষ হলে বাজারে চাহিদা বেশি থাকে। তাই মুনাফাও অনেক বেশি হয়। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় উঁচু জমিতে সবজি চাষে ঝুঁকছেন তারা। অল্প সময়ে কম খরচে অধিক মুনাফা লাভের জন্য ফুল কপি ও বাঁধা কপির জুড়ি নেই। পানি জমে না এমন উঁচু জমি কপি চাষের জন্য উপযুক্ত।

নুরল হক ও জহুরুল হক জানান, সবজির কদর সারা দেশে। তবে তা আগাম চাষ করতে পারলে আরো বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে কীটনাশক মুক্ত সবজি চাষ করা সম্ভব। সবজি ক্ষেতে পোকা মাকড় হবেই। সেজন্য কীটনাশক ব্যবহার না করেই আধুনিক বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকা দমন করা সম্ভব। তারা কীটনাশক ব্যবহার অনেকটাই কমিয়েছেন। তাই তাদের ক্ষেতের সবজি গুণগত মানে সেরা হওয়ায় চাহিদাও অনেক বেশি।

শীতকালিন সবজির বাজার ধরতে তারা ফুল কপি ও বাঁধা কপির চারা রোপন করেছেন। কার্তিক মাসের শেষ দিকে তাদের সবজি বাজারে যাবে। এ জন্য নার্সারি থেকে সবজি চারা সংগ্রহ করে ২০/২৫ দিন আগে রোপন করেছেন। তাদের সাড়ে তিন একর জমিতে প্রায় ৩৫-৩৮ হাজার কপির চারা রোপন করা হবে। প্রতিটি চারার পিছনে তাদের খরচ হবে প্রায় ৫-৭ টাকা। আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিটি কপি ক্ষেতেই বিক্রি হবে ১৫-২০ টাকা মুল্যে। এ কপি ক্ষেত থেকে মাত্র তিন মাসে সাড়ে তিন থেকে ৪ লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন তারা। এসবের পাশাপাশি লাউ, বেগুনসহ নানান ধরনের সবজি চাষ করে।

শ্যালক দুলাভাইয়ের সবজি বিপ্লব দেখে ওই এলাকায় প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে সবজি চাষির সংখ্যা। বড়বাড়ি ব্লোকেই রয়েছেন প্রায় অর্ধশত সবজি চাষি। যারা আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সবজি চাষ করেন।

ওই এলাকার কৃষক কামাল ও মহিদুল ইসলাম জানান, সবজি চারা রোপনের আগে বেড করে কিছু দিন রাখা হয়। এতে কপির চারা রোগ বালাই প্রতিরোধের ক্ষমতা সঞ্চয় করে এবং গাছগুলো সবল হয়। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করে রোপন করেন তারা। তবে এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় তাদের নিজের চারাগুলো নষ্ট হয়নি। ফলে উৎপাদন খরচ কিছুটা কম হওয়ার আশাবাদি তারা।

শুধু বড়বাড়ি এলাকায় নয় জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সবজি চাষ হচ্ছে। সবজি চাষের ব্যপকতার জন্য আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ি, সারপুকুর,ভেলাবাড়ি, দুর্গাপুর, সদর উপজেলার বড়বাড়ি, গোকুন্ডা, মোগলহাট, মহেন্দ্রনগর, কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা, মদাতি, চন্দ্রপুর, হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না, ভেলাগুড়ি, সিংগিমারী, টংভাঙ্গা এবং পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ও কুচলিবাড়ি ইউনিয়নে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের সবজি। শীতের শুরুতে ট্রাকে ট্রাকে ঢাকাসহ সারা দেশে যাবে এ জেলার সবজি।

কমলাবাড়ি গ্রামের সবজি চাষি করিম মিয়া জানান, সবজি চাষের জন্য জমি প্রস্তুতের কাজ চলছে। আগামী সপ্তাহে মুলা বীজ বপন ও কপি চারা রোপন করবেন তিনি। কপি চারা রোপন থেকে ৭৫/৮০ দিনের মধ্যে ফসল বাজারে নেয়া যায়। এ বছর তিন বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতর জানান, গত বছর ৬হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছে এ জেলায়। চলতি বছর সাড়ে ৬হাজার হেক্টর জমির লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। যার মধ্যে চলতি সপ্তাহে প্রায় এক হাজার ৭’শত হেক্টর জমিতে রবি ১৮/১৯ জাতের আগাম সবজি চাষ হয়েছে। এটা রোপন/বপন চলবে মার্চে মধ্যবর্তি পর্যন্ত।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, কৃষকরা যে ফসলে মুনাফা পায়। সেটাতে ঝুঁকে পড়ে। শুধু এ জেলায় নয়, সারা দেশে সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই চাষিরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় আগাম সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিদু ভূষণ রায় জানান, কৃষি বিভাগের লোকজনের নিয়মিত মনিটরিংয়ে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার বেড়েছে। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বাড়ায় চাষিদের মুনাফাও বেড়েছে কয়েকগুণ। চাষিরা এখন বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ করে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে।সূত্র: এনবি

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন