শেরপুরে অবাধে পাখি নিধন হুমকিতে জীব বৈচিত্র্য

71

শরতের নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা যখন ভেসে বেড়ায় আর খাল-বিল ও জলাভূমিতে পানি কমতে শুরু করে, তখনই খাদ্যের সন্ধানে দলে দলে আসতে থাকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। মাছ, শামুক, পোকামাকড়, জলজ উদ্ভিদ ও গুল্মÑএসবই পাখির প্রধান খাবার।

নদী, খাল-বিলসহ শেরপুরের নকলা উপজেলা সবচেয়ে বেশি জলাভূমিসমৃদ্ধ অঞ্চল হওয়ায় শরতের শুরুতেই এখানে দেশি ও কিছুসংখ্যক পরিযায়ী প্রজাতির পাখির আগমন ঘটে বেশি। এরই সুযোগে পাখি শিকারিরা তৎপর হয়ে ওঠে। নকলা উপজেলার উরফা ইউনিয়নের সিঙ্গা বিল, সুতিবিল, মাজাকান্দা বিল ও চিকনা বিল, গৌরদ্বার ইউনিয়নের তেঘড়িয়া বিল, পৌর এলাকার কুরশা বিল এবং পাঠাকাটা ইউনিয়নের বড়ডুবি বিল এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এসব বিলে দেশি প্রজাতির নানা ধরনের বক, পানকৌড়ি, কালিম, ঘুঘুসহ অসংখ্য পাখি ঝাঁকবেঁধে খাদ্যের সন্ধানে চড়ে বেড়াচ্ছে।

কিন্তু এরই মধ্যে একশ্রেণির পাখি শিকারির দল পাখি ধরার কাজে নেমে পড়েছে। তারা বনেবাদারে ও জলাভূমিতে ফাঁদ পেতে তাদের পোষা পাখিদের দিয়ে ডেকে বুনো পাখিদের ফাঁদে ফেলে ধরে। পরে এসব পাখি গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে বিক্রি করে। তবে আশার কথা, জেলার জীববৈচিত্র্য রক্ষাকারী সংগঠন শেরপুর বার্ড কনজারভেশন সোসাইটি, প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব, জন উদ্যোগ, সবুজ বাংলা প্রভৃতি স্বেচ্ছাসেবী সমিতি বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে জলাভূমি ও চরাঞ্চলে ঘুরে পশুপাখি ধরা ও নিধন বন্ধ করার পাশাপাশি বনভূমি বক্ষায় জনমত সৃষ্টির জন্য নিরন্তর কাজ করে যচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে নকলা উপজেলার বার্ড কনজারভেশন সোসাইটির সদস্য গোলাম জাকারিয়া পবন জানান, সংগঠনের সদস্য হিসেবে তিনি এরই মধ্যে জনমত সৃষ্টি করে ও আইনের ভয় দেখিয়ে পাখি শিকারিদের হাত থেকে ৬০-৭০টি বক, ৮-৯টি পানকৌড়ি, ১৮টি ঘুঘু, দুটি কালিম ও একটি ডাহুক উদ্ধার করে মুক্ত আকাশে ছেড়ে দিতে পেরেছেন। তবে তার দুঃখ বানেশ্বরদী ইউনিয়নের আলিনা পাড়ার গ্রামবাসী এ ব্যাপারে চরম বিরোধিতা করে আসছেন। তারাই সেখানকার মরাকান্দা বিলে অবাধে বক-সহ নানা প্রজাতির পাখি শিকার করে থাকেন।

এ প্রসঙ্গে নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া উম্মুল বানিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অচিরেই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

অন্যদিকে এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে আমরা তৎপর আছি। এর আগে পাখি শিকারিদের ধরে তাদের কাছ থেকে পাখি অবমুক্ত করেছি। তবে এ পাখি শিকার রোধ করতে মোবাইল কোর্টের চিন্তাভাবনা আমাদেরও রয়েছে।