সাতক্ষীরায় লবণ সহিষ্ণু নতুন জাতের আখ চাষে সফলতা

468
সংগ্রহ
সংগ্রহ
সংগ্রহ

সাতক্ষীরা : জেলায় একসময় প্রচুর পরিমাণে আখ চাষ করা হতো। জেলার ৭ উপজেলার ৮ থানার মধ্যে তালা, পাটকেলঘাটা, কলারোয়া ও দেবহাটা থানায় আখ চাষে সুনাম ছিল। কিন্তু সাতক্ষীরা জেলায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় না থাকায় ধীরে ধীরে জেলায় আখ চাষের মাত্রা কমেছে।

কিন্তু পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত আখ গবেষণা ইনস্টিটিউটে সমুদ্র উপকূলীয় জেলাগুলোর লবণাক্ত এলাকাতে উচ্চমাত্রার লবণ সহিষ্ণু নতুন ৩৯ ও ৪৬ জাতের আখ চাষ করা হচ্ছে। এ জাতের আখ চাষে কৃষকরা ইতোমধ্যে সফল হয়েছেন।

সদর উপজেলার বালিথা গ্রামের আখ চাষি মো. রুহুল আমিন জানান, তার এলাকার অধিকাংশ জমিতে লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। দানাদার জাতীয় ফসল আগের মত আর ফলে না। তাই আখ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরামর্শে ২ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে লবণ সহিঞ্চু নতুন ৩৯ জাতের আখ রোপণ করে সাফল্য অর্জন করেছেন।

তিনি বলেন, গত ডিসেম্বরে আখের ডোগা রোপন করার পর বর্তমানে ক্ষেতে বড় বড় ঝাড়ে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া তেমন কোনো রোগবালাইও এখনো পর্যন্ত দেখা দেয়নি। আগামীতে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে এ লবণ সহিঞ্চু ৩৯ জাতের আখ চাষ করবেন।

শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী গ্রামের আখ চাষি জোসনা আব্দুর রহিমও ঈশ্বরদীর পাবনা আখ গবেষণা ইনস্টিটিউটের লোকজনের পরামর্শে তার ৩ বিঘা পরিমাণ জমিতে লবণ সহিঞ্চু নতুন ৩৯ জাতের আখ চাষ করেছেন। এমন ভালো ফলন হবে জানলে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে আখ রোপণ করতেন।

বিএসআরআই-এর সমন্বিত গবেষণা কার্যক্রম প্রকল্পের পরিচালক ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সমজিত কুমার পাল জানান, জোরদারকরণ প্রকল্পের অধীণে লবণাক্তপ্রবণ সাতক্ষীরা সদর, তালা, কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলাতে লবণ সহিষ্ণু জাতের আখ চাষ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষিতত্ত্ব ও ফার্মিং সিস্টেম বিভাগ বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইন্সটিটিউট ইশ্বরদী, পাবনা।

তিনি বলেন, এ নতুন ৩৯ ও ৪৬ জাতের আখ যেমন উচ্চমাত্রার লবণ সহ্য করতে পারবে তেমনি ফলন দেবে অধিক পরিমাণ। এটি বিঘা প্রতি সর্বোচ্চ ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর প্রতি বিঘা জমির আখ বিক্রি হবে কমপক্ষে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা। ফলে কৃষক লাভবান হবে এ লবণসহিঞ্চু জাতের আখ চাষ করে। ৩৯ ও ৪৬ জাতের আখ ১৫ থেকে ১৬ মাত্রার লবণ সহ্য করতে পারবে অনায়াসে। তাছাড়া রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাব খুবই কম।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী আব্দুল মান্নান জানান, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ২ হেক্টর, তালায় ৭৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৫ হেক্টর, কালিগঞ্জে ২৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ৫ হেক্টর এবং শ্যামনগর উপজেলাতে ৪ হেক্টর পরিমাণ জমিতে ফসলটি চাষ করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলীয় জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে আখ উৎপাদন কমে যাচ্ছে আশংকাজনকভাবে। তবে লবণসহিঞ্চু নতুন ৩৯-৪৬ জাতের আখ চাষে সাফল্য এসেছে সাতক্ষীরায়। আগামীতে জেলার সব অঞ্চলেই এ জাতের আখ চাষ করতে পারলে কৃষক লাভবান হবে আশা করা যায়।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন