আশানুরূপ উৎপাদন পেতে হলে জন্মের পর হতেই একটি বাছুরের যত্ন, পরিচর্যা, খাদ্য ও প্রতিপালন ব্যবস্থা উন্নত হওয়া প্রয়োজন। খামার স্থাপন করে লাভবান হতে শংকর জাতের অথবা দেশী উন্নত জাতের ও অধিক উৎপাদনশীল গাভী পালন করা উচিত। এ ধরনের গাভী হতে প্রাপ্ত বাছুরের অধিক যত্ন প্রয়োজন এবং এজন্য এদের পরিচালনা ব্যবস্থা সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। জন্মের পর প্রথমেই বাসস্থানের পাশেই শুকনা জায়গায় বাঁশ দিয়ে ঘেরাও করে শুকনা খড় বিছিয়ে বাছুরের থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কয়েকদিন পর পর ঘর পরিষ্কার করে পুরনো খড় ফেলে দিয়ে অথবা রোদে শুকিয়ে নতুন করে দিতে হবে।
বাছুরের খাদ্য ও পুষ্টিঃ
জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস পর্যন্ত বাছুরের দৈহিক বৃদ্ধি অতি দ্রুত হয়। তাই জন্মের পর প্রথম তিন মাস বাছুরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় পুষ্টির অভাব হলে বাছুরের দৈহিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, যৌবন প্রাপ্তি দীর্ঘায়িত হয় অর্থাৎ গর্ভধারণ ক্ষমতা বিলম্বিত হয় বলে খামারীর ক্ষতির কারণ হয়।
দুধঃ
সাধারণত একটি বাছুরকে তার শরীরের ওজনের ১০% ভাগ দুধ খাওয়াতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে জন্মের পর প্রথম ৫-৭ দিন বাছুরকে যেন অবশ্যই শালদুধ খাওয়ানো হয়। ৬-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত দৈনিক নির্দিষ্ট সময়ে দুধ খাওয়াতে হয়। পরবর্তী সময়ে দৈনিক ২ বেলা নির্দিষ্ট পরিমাণ দুধ খাওয়ানোই যথেষ্ট কেননা এ সময়ে বাছুর আঁশ ও দানাদার খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে উঠে। একটি বাছুরকে প্রতিদিন নিম্নলিখিত মাত্রায় দুধ খাওয়ানো উচিতঃ
বয়স অনুপাতে বাচ্চাদের দুধ খাওয়ানোর পরিমাণ।
** ১ম সপ্তাহ ২ লিটার
** ২য় সপ্তাহ ৩ লিটার
** ৩য়-১২ সপ্তাহ ৪ লিটার
** ১৩-১৬ সপ্তাহ ৩ লিটার
** ১৭-২০ সপ্তাহ ২ লিটার
পরবর্তী দুধ ছাড়া পর্যন্ত ১ লিটার।
বাছুরের জন্য আঁশ ও দানাদার খাদ্যঃ
বাছুরকে জন্মের ১ মাস পরেই কিছু কিছু কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাদ্যে অভ্যস্ত করে তুলতে হয়। ২ মাস বয়স হতে পরিমিত সহজপাচ্য আঁশ জাতীয় খাদ্য এবং দৈনিক ২৫০ গ্রাম-৫০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য দিতে হবে। বয়স অনুসারে ক্রমান্বয়ে দানাদার খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে ৪ মাস বয়সে দৈনিক প্রায় ৭৫০ গ্রাম, ৬-৯ মাস বয়স পর্যন্ত ১ কেজি এবং এক বৎসর বয়সে দৈনিক ১.৫ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে। অনুরূপ কাঁচা ঘাসের পরিমাণ বাড়িয়ে দৈনিক ৬-৮ কেজি পর্যন্ত দিতে হবে।
দানাদার খাদ্যের তালিকা টেবিল আকারে দেয়া হলো।
বাছুরের স্বাস্থ্য পরিচর্যাঃ
কতিপয় রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে বাছুরের মালিককে কিছু রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্বন্ধে সচেতন হতে হবে। বাছুরের সাধারণ রোগ হলো-
১. সাদা উদরাময় বা কাফ স্কাউর
২. নেভাল ইল বা নাভীর রোগ
৩. সর্দি বা ঠান্ডা লাগা
৪. উদরাময় বা ডায়রিয়া
৫. কৃমি
৬. গিরা রোগ
এসকল ক্ষেত্রে অবশ্যই ভেটেরিনারি চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাছুরের টিকা প্রদান ও কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর তালিকা।
* ৭-২১ দিন বয়স– Piperazin Citrate দিতে হবে।
* ৪৫ দিন ক্ষুরা রোগ — ৬ সিসি করে চামড়ার নীচে প্রয়োগ করতে হবে।
*৪ মাস Albendazol ও ক্ষূরা রোগের টিকা ৬ সিসি করে চামড়ার নীচে প্রয়োগ করতে হবে।
* ৬ মাস বাদলা (BQ) — প্রতি বছরে ১ বার দিতে হবে।
* ৬ মাস ২১ দিন তড়কা (Anthrax) — প্রতি বছরে ১ বার দিতে হবে।
* ৭ মাস ১৪ দিন গলাফুলা ((HS) — প্রতি বছরে ১ বার দিতে হবে।
* ৮ মাস — Triclabendazole বছরে ২ বার দিতে হবে।
* ১০ মাস ক্ষুরা রোগ ৬ সিসি করে চামড়ার নীচে প্রয়োগ করতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিটি টিকা প্রদানের মাঝে কমপক্ষে ১৪ দিন অবশ্যই বিরতি দিতে হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২১নভেম্বর২০২০