আলু উৎপাদনের জেলা বগুড়াতেই আলুর সংকট!

89

চাহিদার তুলানায় বেশি আলু উৎপাদনের জেলা বগুড়াতেই বাজারে আলুর সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। হিমাগারে পর্যাপ্ত আলু মজুত করে চাহিদামতো বাজারে সরবরাহ না করে আলুর সংকট সৃষ্টি করেছেন মজুতদার ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, পরপর দুই বছর হিমাগারে আলু রেখে লোকসান হওয়ার কারণে এবার তারা পুষিয়ে নেবেন। এরই মধ্যে তিনজন আলু মজুতদারের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দেয়ার কারণে তারাও গোস্বা করে আলু উত্তোলন বন্ধ রেখেছেন। ফলে এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। ভোক্তার অধিকার অধিদপ্তরের লোকজন বাজার থেকে বের হলেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা কেজি।

বগুড়া সদরের কাজি নুরইল গ্রামের আলু ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ চপল বলেন, তিনি তিন হাজার বস্তা (প্রতি বস্তায় ৬০ কেজি) আলু হিমাগারে রেখেছিলেন। হিমাগার ভাড়া, খালি বস্তা ক্রয়, ঘাটতি, ছাড়াও অন্যান্য খরচসহ প্রতি কেজি আলুতে তার খরচ হয়েছে ২৩ টাকা। তিনি ২৭ টাকা কেজি থেকে শুরু করে ৩৫ টাকা কেজি দরে তিন হাজার বস্তা আলু বিক্রি করেছেন। তার আরও ৫০০ বস্তা আলু রয়েছে যা আরও এক মাস পরে বীজ হিসেবে বিক্রি করবেন।

গতকাল মঙ্গলবার বগুড়ার পাইকারী বাজার রাজাবাজার ঘুরে দেখা গেছে অজিত কুমার নামের মাত্র একজন ব্যবসায়ী আলু বিক্রি করছেন। তিনি কার্ডিনাল জাতের আলু পাইকারি ৩৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও রাজাবাজারেই খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি। এছাড়া রাজাবাজারে লালপাকরি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজি।

রাজাবাজার আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতি (একাংশের) সভাপতি আব্দুল হান্নান বলেন, রাজাবাজারে আড়তে আলু বিক্রি হচ্ছে না বললেই চলে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি বন্ধ করে তাদের প্রতিষ্ঠানে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, হিমাগারে ৩৫ টাকা কেজি আলু কেনার পরে ক্যাশ মেমো দেয়া হচ্ছে ২৭ টাকা কেজি। তিনি আরও বলেন, ভোক্তার অধিকার অধিদপ্তরের অভিযানের পর রাজাবাজারে এক দিনের জন্য ১৭০ বস্তা আলু মাইকিং করে ৩৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বগুড়ার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মমতাজ হক জানান, বগুড়ায় হিমাগারগুলোতে এখন পর্যন্ত ৮৫ হাজার ৩৯৪ মেট্রিকটন খাবার উপযোগী আলু মজুত রয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মতলুবর রহমান জানান, বগুড়ায় এ বছর ৫৩ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ১২ লাখ ২৪ হাজার ৩৪২ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। বগুড়া জেলায় ৩৭ লাখ মানুষের জন্য সারা বছর আলু প্রয়োজন দুই লাখ মেট্রিক টন।

বগুড়ায় আলু সংরক্ষণের জন্য ৪১টি হিমাগার রয়েছে। হিমাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতা ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৬২৯ মেট্রিক টন। চলতি বছর আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে খাবার উপযোগী ২ লাখ ৪২ হাজার ২৮৮ মেট্রিক টন এবং বীজ আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে ৮৫ হাজার ৯০৪ মেট্রিক টন। তিনি আরও বলেন, আলু সংকটের কোনো কারণই নেই।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অভিযানে তিনজনের নামে মামলা দেয়ার পর যারা আলু মজুত করেছেন তারা গোস্বা করেছেন। এ কারণে হিমাগার থেকে তারা আলু উত্তোলন করছেন না। তিনি বলেন, অভিযান করে মামলা দেয়ায় তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্কও দেখা দিয়েছে। এই আতঙ্কের কারণে আগামী মৌসুমে হিমাগারে আলু মজুতে আগ্রহ হারালে কৃষক বিপাকে পড়ে যাবে। এ কারণে যারা আলু মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন তাদের সঙ্গে বসে সমাধান করা দরকার।

শিবগঞ্জ উপজেলার কাফেলা কোল্ড স্টোরেজের হিসাবরক্ষক আক্তারুজ্জামান মিল্টন বলেন, সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সেই দামে আলু বিক্রি করলেও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন, কিন্তু হিমাগার কর্তৃপক্ষের পক্ষে কোনোভাবেই ব্যবসায়ীদের ওই দামে আলু বিক্রিতে বাধ্য করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমরা অন্যের আলু সংরক্ষণ করে থাকি। বিক্রির সময় পাইকারের সঙ্গে আলুর মালিক দাম নির্ধারণ করেন। হিমাগার থেকে আলু বের করার সময় আমরা চালান দিয়ে থাকি। চালান সরকার নির্ধারিত ২৭ টাকা কেজি লিখে দেয়া হয়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বগুড়ার সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রেজভী জানান, ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দামে আলু কেনাবেচা না করলে আগামীতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।