আশ্বিন মাসের কৃষি

1166

arshinmonth

কাশফুলের শুভ্রতা, দিগন্ত জোড়া সবুজ আর সুনীল আকাশে ভেসে বেড়ানো চিলতে সাদা মেঘ আমাদের মনে করিয়ে দেয় বর্ষার শেষে আনন্দের বার্তা নিয়ে শরৎ এসেছে। সুপ্রিয় কৃষিজীবি ভাইবোন, আপনাদের সবার জন্য শুভ কামনা। বর্ষা মৌসুমের সবটুকু ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া আর চলতি মৌসুমের পুরো পাওনা আদায় করতে কার্যকর প্রস্তুতি নেয়ার সময় এখন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই আশ্বিন মাসের বৃহত্তর কৃষি ভুবনের করণীয় বিষয়গুলো।
আমন ধান:
১। আমন ধানের বয়স ৪০-৫০ দিন হলে ইউরিয়ার শেষ কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে।
২। সার প্রয়োগের আগে জমির আগাছা পরিস্কার করে নিতে হবে এবং জমিতে ছিপছিপে পানি রাখতে হবে।
৩। এ সময় বৃষ্টির অভাবে খরা দেখা দিতে পারে। সেজন্য সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। ফিতা পাইপের মাধ্যমে সম্পূরক সেচ দিলে পানির অপচয় অনেক কম হয়।
৪। নিচু এলাকায় আশ্বিন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত স্থানীয় উন্নত জাতের শাইল ধানের চারা রোপণ করতে পারেন।এ ক্ষেত্রে প্রতি গুছিতে ৫-৭ টি চারা দিয়ে ঘন করে রোপণ করতে হবে।
৫। শিষ কাটা, লেদা পোকা ধানের জমি আক্রমষ করতে পারে। প্রতি বর্গমিটার আমন জমিতে ২-৫ টি লেদা পোকার উপস্থিতি মারাতœক ক্ষতির পূর্বাভাস। তাই সতর্ক থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬। এ সময় মাজরা , পামরি, চুঙ্গী, গলমাছি পোকার আক্রমণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত জমি পরিদর্শন করে, জমিতে খুটি দিয়ে , আলোর ফাঁদ পেতে, হাতজাল দিয়ে পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৭। খোলপড়া, পাতায় দাগপড়া রোগ দেখা দিতে পারে। তাছাড়া সঠিক বালাইনাশক সঠিক মাত্রায় সঠিক নিয়মে, সঠিক সময় শেষ কৌশল হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
নাবি আমন রোপণ:
১। কোনো কারনে আমন সময় মতো চাষ করতে না পারলে আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিআর ২২, বিআর ২৩, বিনাশাইল বা স্থানীয় জাতের চারা রোপণ করা যায়।
২।গুছিতে ৫-৭ টি চারা রোপণ করতে হবে।
৩। অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি ইউরিয়া প্রয়োগ ও অতিরিক্ত পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যায় এবং দেরির ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায়।
আখ:
১। আখের চারা উৎপাদনের উপযুক্ত সময় এখন।
২। সাধারনত বীজতলা পদ্ধতি ও পলিব্যাগ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করা যায়।
৩। পলিব্যাগে চারা উৎপাদন করা গেলে বীজ আখ কম লাগে এবং চারার মত্যুহার কম হয়।
৪। চারা তৈরি করে বাড়ির আঙ্গিনায় সুবিধাজনক স্থানে সারি করে রেখে খড় বা শুকনো আখের পাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
৫। চারার বয়স ১-২ মাস হলে মূল জতিতে রোপণ করতে হবে।
৬। কাটুই বা অন্য পোকা যেন চারার ক্ষতি করতে না পারে সে দিকে সতর্ক থাকতে হবে।
বিনা চাষে ফসল আবাদ
১। মাঠ থেকে বন্যার পানি নেমে গেলে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় বিনা চাষে অনেক ফসল আবাদ করা যায়।
২। ভুট্টা, গম, আলু, সরিষা, মাসকলাই বা অন্যান্য ডাল ফসল, লালশাক, পালংশাক, ডাটাশাক বিনা চাষে লাভজনকভাবে অনায়াসে আবাদ করা যায়।
৩। সঠিক পরিমান বীজ সামান্য পরিমান সার এবং প্রয়োজনীয় পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে লাভ হবে অনেক।
৪। যেসব জমিতে উফশী বোরো ধানের চাষ করা হয় সেসব জমিতে স্বল্পমেয়াদি টরি-৭ ও কল্যাণী জাতের সরিষা চাষ করতে পারেন।
শাকসবজি:
১। আগাম শীতের সবজি উৎপাদনের জন্য উঁচু জায়গা কুপিয়ে পরিমান মতো জৈব ও রাসায়নিক সার বিশেষ করে ইউরিয়া প্রয়োগ করে শাকসবজি উৎপাদন করা যায়।
২। শাকের মধ্যে মূলা, লালশাক, পালংশাক, চিনাশাক, সরিষা শাক অনায়াসে করা যায়।
৩। সবজির মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শালগম, টমেটো, বেগুন, ব্রোকলি বা সবুজ ফুলকপিসহ অন্যান্য শীতকালীন সবজির চারা তৈরি করে মূল জমিতে বিশেষ যত্নে আবাদ করা যায়।
কলা:
১। অন্যান্য সময়ের থেকে আশ্বিন মাসে কলার চারা রোপণ করা সবচেয়ে বেশি লাভজনক। এতে ১০-১১ মাসে কলার ছড়া কাটা যায়।
২। ভালো উৎস বা বিশ্বস্ত চাষি ভাইয়ের কাছ থেকে কলার অসি চারা সংগ্রহ করে রোপণ করতে হবে
৩। কলার চারা রোপণের জন্য ২-২.৫ মিটার দূরত্বে ৬০ সেমি. চওড়া এবং ৬০ সেমি. গভীর গর্ত করে রোপণ করতে হবে।
৪। গর্তপ্রতি ৫-৭ কেজি গোবর, ১২৫ গ্রাম করে ইউরিয়া, টিএসপি এবং এমওপি সার এবং ৫ গ্রাম বরিক এসিড ভালোভাবে মিিিশয়ে ৫-৭ দিন পর অসি চারা রোপণ করতে হবে।
৫। কলা বাগানে সাথি ফসল হিসেবে ধান, গম, ভুট্টা ছাড়া যে কোনো রবি ফসল চাষ করা যায়।
প্রাণিসম্পদ:
১।হাঁস-মুরগীর কলেরা, ককসিডিয়া, রানীক্ষেত রোগের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
২। প্রাথমিক ভাবে টিকা প্রদান, প্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়ানোসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক।
৩। এ মাসে হাঁস-মুরগির বাচ্চা ফুটানোর ব্যবস্থা নিতে পারেন। বাচ্চা ফুটানোর জন্য অতিরিক্ত ডিম দেবেন না। তাছাড়া ডিম ফুটানো মুরগীর জন্য অতিরিক্ত বিশেষ খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।