কুষ্টিয়ায় দ্বিগুণ দামে আমন বীজ বিক্রির অভিযোগ

278

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) মাধ্যমে সরবরাহ করা উচ্চ ফলনশীল আমন বীজ নির্ধারিত দামের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডিপো থেকে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম দেয়ার অজুহাতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সরকার নির্ধারিত ৩শ ৫০ টাকা মূল্যের বীজ ছয়শ’ থেকে সাতশ’ টাকায় বিক্রি করছেন ডিলাররা। এদিকে সময়মতো বীজতলা তৈরি করতে না পারলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এই আশঙ্কায় বাধ্য হয়ে চড়া দামে কিনে নিতে হচ্ছে কৃষকদের। আবার অনেকে চড়া দাম দিয়েও বীজ পাচ্ছেন না। কোনো রকম দামাদামি করলে বীজ নেই বলেও ফেরত দেয়া হচ্ছে অনেককে। ফলে বীজ নিয়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলার সর্বত্র কৃষকদের মধ্যে একটা চাপা ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তবে উপজেলা কৃষি বিভাগের দাবি, বীজের কোনো সংকট নেই। কৃষকদের হতাশ হওয়ারও কিছু নেই। কৃত্রিম সংকট তৈরি হলেও আমনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে না।

বিএডিসি সূত্রে জানা যায়, গত ১ জুন থেকে ৬ উপজেলায় ১২০ ব্যবসায়ীকে ডিলার হিসাবে নিয়োগ দেয় বিএডিসি কর্তৃপক্ষ। মৌসুমের শুরু থেকেই এলাকার চাহিদা অনুযায়ী ডিপো থেকে বীজ উত্তোলন করেন ডিলাররা। কিন্তু বীজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দরিদ্র কৃষকের কাছে তা দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে অধিক মুনাফা লুফে নিচ্ছেন ডিলাররা। জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের বাজার মনিটরিং না থাকায় ডিলাররা ইচ্ছেমতো ১০ কেজি ওজনের এক বস্তা বীজ নির্ধারিত মূল্য ৩শ’ ৫০টাকার পরিবর্তে ছয়শ’ ৮০’ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে কৃষকরা বিল ভাউচার চাইলে দেওয়া হচ্ছে না। কুষ্টিয়া শহরের কলেজ মোড় এলাকার বীজ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে এই দ্বিগুন দামের বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এছাড়া আইলচারা, বিত্তিপাড়া, আইলচারা, পোড়াদহ, আমলা, মিরপুর, খুলিশাকুন্ডি, দৌলতপুর, আল্লারদর্গা, ভেড়ামারা, কুমারখালী, ও খোকসা বাজারেও এরকম দ্বিগুন দামের বীজ বিক্রয় করা হচ্ছে। তবে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েকটি দোকানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করেছে। পোড়াদহ এলাকার কৃষক রাজিব আলী জানান, আইলচারা বাজারের হাবিব ট্রেডার্স থেকে এ রাইজ গোল্ড এক কেজির হাইব্রীড ধান কিনেছি। প্যাকেটের গায়ে ৩৫০টাকা লেখা থাকলেও আমার কাছে সাড়ে ৪শ টাকা নিয়েছে। শুধু আমার কাছে নয়, বীজ সংকটের কথা বলে বিভিন্ন কৃষকের কাছ থেকেই এমন বেশি দাম নিয়েছে। তবে সেই দোকানীর কাছে বিল ভাউচার চাউলে দিতে অস্বীকৃতি জানান।

বিপুল নামের এক কৃষকপুত্র শহরের কলেজ মোড় এলাকার একটি বীজের দোকান থেকে দুই প্যাকেট (২০কেজি) ভিত্তি বীজ কিনেছে। তার কাছ থেকে প্যাকেট প্রতি সাড়ে ৬শ টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে ভাউচার চাইলে ভাউচারে প্রতি প্যাকেট ৩৪০ টাকা করে উল্লেখ করে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিম হোসেন বেশি দামে বীজ বিক্রির কথা শুনছেন দাবি করে বলেন, বীজের কোনো সংকট নেই। এটা স্থানীয় ডিলারদের কারসাজি। কৃত্রিম সংকট তৈরি বা বেশি দামে বিক্রির প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) কুষ্টিয়ার উপপরিচালক (বীজ) কামরুজ্জামান জানান, সরকারি বীজের কোনো সংকট নেই। তবে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে যেভাবে বরাদ্দ দেয়া হয় সে অনুপাতে ডিলারদের মাঝে বীজ বিতরণ করেন তারা। তিনি জানান, বিএডিসির ভিত্তি বীজ ১ কেজির ব্যাগ ৪৪০ টাকা এবং প্রত্যায়িত বীজের ১ কেশজির প্যাকেট ৩৫০ টাকা বিক্রি করার কথা। এই সরকারী দামের অধিক দামে বিক্রি করলে সেসব ব্যবসায়ীদের মোবাইল কোর্টের আওতায় আনছি। কৃষকদের কাছে কোনরকমে বেশি দামে বিক্রি করা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
এস এম জামাল, কুষ্টিয়া থেকে