ক্ষতিকর পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি

1454
রোগবালাই

পোঁকামাকড় ও রোগবালাই থেকে ফসলকে রক্ষা করা, কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনা ও পরিবেশ সম্মতভাবে ফসল উৎপাদন- এই তিনটি স্লোগান নিয়ে ইরি-বোরো ক্ষেতে ‘ডাল পোতা উৎসব’ (পার্চিং উৎসব) শুরু হয়েছে। টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের দিয়ে ইরি-বোরো ক্ষেতে ডালপালা পুঁতার কার্যক্রমের উদ্যোগটি নিয়েছেন স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। আর এ কারণে উপজেলার কৃষকের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইরি-বারো ক্ষেতের পোকা দমন করার ‘পার্চিং পদ্ধতি’।

ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ থেকে ইরি-বোরো ক্ষেত রক্ষায় এ পদ্ধতি একটি কৃষি বান্ধব প্রযুক্তি। সাধারণত ‘লাইভ পার্চিং’ ও ‘ডেথ পার্চিং’ নামের দুই ধরনের পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে থাকে। কৃষকরা এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের অধিক ফলন পেয়ে থাকে। এছাড়া জমিতে কীটনাশক খরচ কম ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পায়। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামগঞ্জের কৃষকদের সবুজ ধান ক্ষেত বাতাসে দোল খাচ্ছে। ক্ষেতের মধ্যে একর প্রতি ১০ থেকে ১২ টি বাঁশের কঞ্চি কিংবা গাছের ডাল পোঁতা রয়েছে। ওই পার্চিংয়ে (খুঁটিতে) ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসছে। সুযোগ বুঝে ধানক্ষেতে থাকা ক্ষতিকর পোকা ওইসব পাখিরা খেয়ে ফেলছে।

এ নিয়ে উপজেলার ইন্দারজানি গ্রামের কৃষক আজগর আলীর কাছে জানতে চাইলে বলেন, এ বছর আমি ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহার করেছি। এতে খরচ নেই। গজারিয়া গ্রামের কৃষক হুমায়ুন সরকার জানান, বাড়ির গাছ থেকে ডাল কেটে ক্ষেতে পুঁতে দিয়েছি। ওই ডালে বসা পাখিরাই ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোঁকা খেয়ে ফেলছে। এতে যেমন ধানগাছের উপকার হচ্ছে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাচ্ছে।

উপজেলার বেড়বাড়ি গ্রামের কৃষক আশরাফ আলী বলেন, উৎসবের মধ্য দিয়ে আমার এক একর জমির ফসলের ক্ষেতে ১০টি গাছের মরা ডাল পুঁতেছি। কয়েকদিন ধরে ক্ষেতে গিয়ে দেখি ডালে পাখি বসে আছে, আর উড়ে উড়ে পোঁকামাকড় খাচ্ছে। এ দৃশ্য দেখতে আমার ভালো লেগেছে। এটা যদিও আগেও দেখেছি তারপরেও এবার আরও ভালো লেগেছে। হতেয়া গ্রামের মাহবুব হোসেন ও উপজেলার কীর্তনখোলা গ্রামের কৃষক শহীদুল্লাহ একই ধরনের মন্তব্য করেন।

সখীপুর কৃষি কার্যালয়ের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, ধানক্ষেতে গাছের ডাল পুঁতে রাখলে পাখিরা ওই ডালে বসে পোঁকামাকড় খেয়ে ফেলে। ফলে ওই জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয়না। পরিবেশ সম্মতভাবে ফসল উৎপাদন করা যায়। তিনি বলেন, কৃষকরা অনেক আগে থেকেই ফসলের ক্ষেতে গাছের ডাল পুঁতে রাখত। বর্তমান কৃষি বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে পোঁকামাকড় থেকে ফসল রক্ষার জন্য ক্ষেতে ডাল পুঁতা পদ্ধতি নতুনভাবে আবিষ্কার করেছেন। কৃষি বিভাগ এ মৌসুমে সখীপুরের কৃষকদের মাঝে এ পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

ফার্মসএন্ডফার্মার ২৪/জেডএইচ