গণমাধ্যম সঠিক ও বস্তুনির্ভর বৈজ্ঞানিক তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনকে জোরদার করতে পারে

291

ক্রাবি

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ একজনের জন্য সুখবর ও অন্য জনের জন্য দুঃসংবাদ হতে পারে। তবে তথ্য বৈজ্ঞানিক যুক্তি ও তথ্য নির্ভর না হলে সেটা সাধারণ জনগনের জন্য সুখকর না হয়ে হুমকি হতে পারে। তাই সংবাদ পরিবেশনকালে সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞ ও বৈজ্ঞানিকদের মতামত যুক্ত করে সংবাদ পরিবেশন করলে বিভ্রান্তিকর অবস্থা থেকে জাতি মুক্ত হতে পারে। সেকারণে নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনকে সত্যিকারের সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হলে গণমাধ্যম কর্মীদের জাতির কাছে বিজ্ঞানসম্মত ও সঠিক তথ্য তুলে ধরা প্রয়োজন।

কর্পোরেট ব্যবসা প্রসারের কারণে অনেকগুলি কর্পোরেট হাউজ নিজেরা গণমাধ্যম খুলে একটি তথ্য ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রচার করছে, ফলে জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছে। আবার গণমাধ্যমের সাথে বৈজ্ঞানিক ও বিশেষজ্ঞদের সঠিক ও কার্যকর যোগাযোগ না থাকায় তারাও প্রকৃত তথ্য পেতে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।

নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন যেহেতু একটি সর্বজনীন বিষয়, সেকারণে সকল প্রকার দল, মত, জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। আর নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত না হলে পুষ্টির চাহিদা পুরণ সম্ভব নয়, আর পুষ্টির চাহিদা পূরণ সম্ভব না হলে মেধাবী জাতি গঠন সম্ভব নয়। তাই মেধাবী ও সুস্থ-সবল, কর্মক্ষম জাতি গঠনে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সকল মহলকে একযোগে কাজ করার তাগিদ প্রদান করা হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

১ এপ্রিল চট্টগ্রামে ক্যাব’র পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রকল্পের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মিডিয়া ডায়লগে বিভিন্ন বক্তারা উপরোক্ত মতামত ব্যক্ত করেন।

ইউকেএইড, বৃটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় প্রকাশ প্রকল্পের কারিগরি সহযোগিতায় পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রকল্প, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রকল্পের উদ্যোগে নগরীর ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড সাইন্স ফ্যাকাল্টি মিলনায়তনে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মিডিয়া ডায়লগে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. ফরহাদ হোসেন, বিশেষ অতিথি ছিলেন সিভাসু’র পোল্ট্রি রিচার্স ও ট্রেনিং সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. পরিতোষ কুমার বিশ্বাস, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক জসিম, ও সিভয়েস২৪ডটকমের সম্পাদক এম নাসিরুল হক।

ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশনেন দেশটিভির ব্যুরো প্রধান আলমগীর সবুজ, ডেইলি নিউএজ’র ব্যুারো প্রধান ফেরদৌস আরা, দৈনিক পূর্ব কোণের ইফতেখারুল ইসলাম, দৈনিক প্রিয়চট্টগ্রামের নির্বাহী সম্পাদক শাউন ইমতিয়াজ, বাংলানিউজ২৪ডটকমের আল রমহান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের রেজা মুজাম্মেল, দৈনিক শেয়ার বিজের সাইয়েদ সবুজ, সমকালের শৈবাল আচার্য্য প্রমুখ।

মতবিনিময় সভায় নিরাপদ পোল্ট্রি মুরগি নিশ্চিতে করনীয় নিয়ে মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনা করেন পাঁচলাইশ থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাকিয়া খাতুন ও ক্যাব আইবিপি অন পোল্ট্রি সেক্টর সুশাসন প্রকল্প নিয়ে মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনা করেন ক্যাব চট্টগ্রামের মাঠ সমন্বয়কারী জগদিশ চন্দ্র রায়।

সভায় বক্তারা আরও বলেন, গণমাধ্যমগুলি মাঠ পর্যায় থেকে সঠিক ও বস্তুনির্ভর তথ্য পেতে অনেক সময় বিড়ম্বনার শিকার হয়। যার কারণে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে সমন্বিতভাবে সরকারি-বেসরকারি পক্ষ থেকে পাওয়া কঠিন হচ্ছে। আর গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এক্ষেত্রে অনেক নতুন নতুন গবেষণা উদ্ভাবন করলেও মাঠ পর্যায়ে তার সংযোগ স্থাপন যথাযথভাবে হচ্ছে না। ফলে বিচ্ছিন্ন ও খন্ডিত চিত্র ভাবে তথ্য উপস্থাপনের কারণে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য গণমাধ্যম কর্মীরা এগিয়ে আসতে পারে। সেকারণে নিরাপদ খাদ্য, বিশেষ করে পোল্ট্রি সাইন্সের এই ক্ষেত্রগুলিতে মিডিয়া ফেলোশিপ চালু করা যেতে পারে। যাতে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও মাঠ পর্যায়ের তথ্য তুলে আনা সম্ভব হয়।

বক্তারা আরও বলেন, দেশের জনগোষ্ঠির একটি বড় অংশ যেহেতু সচেতন নয়, আর সবার কাছে সকল তথ্য সমানভাবে পরিবেশিত হচ্ছে না, সেকারণে গণমাধ্যমকর্মীরা তৃণমূল জনগণের মাঝে সঠিক তথ্য পৌঁছাতে ও জনগণের মাঝে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে সচেতন করতে সহায়কের ভূমিকা পালন করতে পারে।

এছাড়াও সংবাদ পরিবেশনে অনেক সময় বিশেষজ্ঞদের মতামতের নামে এমন কিছু লোকজনের মতামত যুক্ত করা হয়, যারা আসলে এ বিষয়ের সাথে সরাসরি যুক্ত নয়। ফলে জনগণ প্রকৃত সত্য তথ্য জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন