চট্টগ্রামে ক্যাবের ‘ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ নিয়ে মতবিনিময় সভা

314

participants

সরকার দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে ভোক্তা সংরক্ষণ আইন ২০০৯ প্রণয়ন করেছেন, যেখানে মানুষ এসএমএস, মেইল, ফোনে বা চিঠি প্রেরণ করে প্রতারিত বা ভোগান্তির শিকার হলে আইনি প্রতিকার পেতে পারেন। আর অভিযোগ প্রমাণিত হলে জরিমানার ২৫ শতাংশ আবেদনকারী পাবেন। কিন্তু দেশের অধিকাংশ জনগণ এখনও আইন সম্পর্কে জানে না বা সচেতন নয়।

রোববার (২৮ জানুয়ারি) মুরাদপুরস্থ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি মিলনায়তনে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের ‘‘পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রকল্পের উদ্যোগে ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভোক্তা ও নাগরিক সমাজের করণীয় ’’ নিয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপরোক্ত আহ্বান জানানো হয়।

ক্যাবের নেতারা জানান, পৃথিবীর সব দেশে ক্রেতা-ভোক্তারা ব্যবসা বাণিজ্যের মূল নিয়ামক হলেও বাংলাদেশে তার বিপরীত, এখানে ব্যবসায়ীরাই যেকোনো পণ্য বা সেবার মূল নিয়ামক হিসাবে কাজ করেন। তারা যা বাজারজাত করবে, ভোক্তাকে নিরবে তা হজম করা ছাড়া বিকল্প নেই। এর পেছনে অন্তর্নিহিত কারণ হলো সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা সুসংগঠিত আর ভোক্তারা সংগঠিত নয় এবং অধিকার ও দায়দায়িত্ব সম্পর্কে একেবারেই সচেতন নয়। তাই এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে ভোক্তা হিসাবে যেমনি ভোক্তা অধিকার নিয়ে সচেতন হতে হবে, তেমনি ভোক্তাদের সংগঠিত হয়ে নিজ নিজ এলাকায় ভোক্তা অধিকার আন্দোলন জোরদার করতে হবে। তাহলেই আগামী প্রজন্ম ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাদ্য পেতে পারে,

তারা আরো জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা ও মানসম্মত সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে। যা দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অনিয়ম ও দুনীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার হবে এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে।

দেশে খাদ্য নিরাপত্তার ঘাটতির প্রসঙ্গ তুলে তারা জানান, একসময় মানুষ অনাহারে, অর্ধাহারে জীবন যাপন করতো, এখন মানুষ না খেয়ে মরছে না, মরছে ভেজাল ও অনিরাপদ খাবার খেয়ে। তাই এখন প্রয়োজন আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর পৃথিবী রচনায় ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাবারের আন্দোলনকে বেগবান করতে সব পর্যায়ে ভোক্তাদের সংগঠিত হয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মহিলা কাউন্সিলর জেসমিন পারভীন জেসির সভাপতিত্বে ও ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সহায়ক হিসাবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন ও ক্যাব কেন্দ্রিয় কার্যালয়ের আইবিপি প্রজেক্ট অফিসার মিজানুর রহমান।

picture-IBP-ii

আলোচনায় অংশ নেন ব্রিট্রিশ কাউন্সিলের প্রকাশ প্রকল্পের কর্মসূচি সমন্বয়কারী শ্যামল চাকমা, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান, এনআইটির অধ্যক্ষ আহসান হাবিব, নারী নেত্রী সায়মা হক, রুখসানা আখতারুন্নবী, নাসিমা আলম, সমাজকর্মী মাহমুদ রেজা সুজা, বিহারী কমিউনিটির নেতা আনোয়ার হোসেন, ক্যাব নেতা জানে আলম, সেলিম জাহাঙ্গীর, জহুরুল ইসলাম, সমাজকর্মী এম এইচ মানিক, এমডি আলমগীর, মুক্তা শেখ মুক্তি, কামরুল রশিদ পারভেজ, ক্যাব চট্টগ্রামের ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর মশিউর রহমান প্রমুখ।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা দেশের ঘুমন্ত ভোক্তাদের জাগাতে তৃণমূল পর্যায়ে আরো বেশি সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনায় দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থা, উন্নয়ন সংগঠন, নাগরিক সংগঠন, পেশাজীবী, মানবাধিকার ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে। একই সাথে সরকার, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলিকেও ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলিকে পৃষ্টপোষতায় এগিয়ে আসতে হবে।

সভায় বলা হয় বর্তমান সরকার এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নানামুখী কর্মসূচি নিচ্ছে এবং দেশ মধ্য আয়ের দেশে উপনীত হতে যাচ্ছে। এখানে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মাঝে বৈষম্য রোধে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া না হলে একটি বিশাল জনগোষ্ঠী মধ্যআয়ের দেশের সুবিধা অর্জনে সক্ষম হবে না। কারণ এসডিজির অন্যতম লক্ষ্যমাত্রা হলো সাসটেইনবেল কনজামশন অ্যান্ড প্রোডাকশন।

সভায় পাচঁলাইশ থানায় পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভোক্তাদের মাঝে অধিকতর সচেতনতা ও শিক্ষা বিস্তারে আরো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মহিলা কাউন্সিলর সেমিন পারভীন জেসিকে আহ্বায়ক, নারী নেত্রী সায়মা হক ও সমাজকর্মী মাহমুদ রেজা সুজাকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ক্যাব পাঁচলাইশ থানা কমিটি পুনর্গঠন করা হয়।

আহ্বায়ক কমিটি আগামী ১ মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন। মতবিনিময় সভায় পাঁচলাইশ থানার ক্যাব, নারী, মানবাধিকার, সামাজিক সাংস্কৃতিক, ছাত্র, যুব সংগঠনের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশার ৫০ জন অংশগ্রহণ করেন।

প্রতিবেদক: শম্পা কে নাহার, ক্যাব বিভাগীয় কার্যালয়, চট্টগ্রাম।

 

rafid

ফার্মমঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এমএস