জয়পুরহাটে নবান্ন উৎসবে মাছের মেলা

65

জয়পুরহাটের কালাইয়ে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে বসা এক দিনের মাছের মেলাকে ঘিরে এলাকাবাসীর মনে উৎসব আর আনন্দের আমেজ দেখা দেয়। গতকাল শনিবার ভোরবেলা থেকেই কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা বাজারে বসা রকমারি দোকানলোয় চলে মাছ বেচাকেনার ধুম। মাছের মেলাটিকে ঘিরে এদিন এ উপজেলা, পার্শ্ববর্তী ক্ষেতলাল ও বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার গ্রাম-মহল্লাগুলোয় সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। তাই এসব এলাকার ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সাধ্য অনুযায়ী পছন্দের মাছ কিনে বাড়ি ফেরে।

জানা গেছে, প্রায় ১৬ বছর আগে থেকে প্রতি বছরের মতো এবারেও নবান্ন উপলক্ষে বসা মেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ মাছ কিনতে আসে। বোয়াল, গøাসকার্প, রুই, সিলভার, কাতলা, মৃগেল, ব্রিগেট, বাগারসহ রকমারি প্রজাতির মাছ দিয়ে পসরা সাজান ব্যবসায়ীরা। মেলায় ওঠা বড় মাছগুলোর ওজন ছিল সর্বোচ্চ ২০-২২ কেজি পর্যন্ত। উৎসবমুখর পরিবেশে মাছ বেচাকেনা হচ্ছে বলে জানান মেলায় আগত ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা।

কালাই উপজেলার বানিহারা গ্রামের আব্দুল কাইয়ুম আট কেজি ওজনের মাছ কিনেছেন, কালাই পৌরসভার মুলগ্রামের সোহেল হোসেন ৯ কেজি ওজনের মাছ কিনেছেন, চাকরিসূত্রে কালাই বসবাসকারী রংপুরের আব্দুল জোব্বার মাছ কিনেছেন আট কেজি ওজনের। বেজায় খুশি এসব ক্রেতা জানান, প্রতি বছর এদিন তাদের বাসায় আসেন মেয়ে, জামাই, শ্বশুর-শাশুড়ি, মা-বাবাসহ বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন। এসব পরমাত্মীয়দের একটু ভালো আপ্যায়নের ব্যবস্থা করতেই দাম বেশি হলেও বড় মাছ কিনেছেন বলেও জানান তারা।

মাছ ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, আবদুল লতিফ, হাসান, বিমল, সাজু, শহিদুল, মোরশেদ, সাইদুলসহ অনেকে জানান, মাছের মেলায় প্রচুর লোক সমাগম হলেও বেচাকেনা মোটামুটি চলছে। ছোট দু-তিন কেজি মাছের দাম প্রতি কেজি ২৫০ থেকে বড় মাছের দাম প্রতি কেজি আট-নয়শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান মাছ ব্যবসায়ীরা।

মাছ ব্যবসায়ী নাহিদ চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান, মাহবুবসহ অনেকে জানান, খাদ্যদ্রব্য দাম যেভাবে দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেক্ষেত্রে তারা বাজারে মূল্য না পাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী মাছ চাষ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে এ ধরনের মেলা হলে একদিকে যেমন জেলার মাছ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রসিদ্ধ হবে, অন্যদিকে দাম বেশি হলে মাছচাষিরাও উজ্জীবিত হবেন বলেও জানান মাছ চাষিরা।

গ্রামবাংলার এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে আয়োজকরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বলে মন্তব্য করেন। কালাই পৌরসভার মেয়র রাবেয়া সুলতানা জানান, ‘এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে মাছচাষি, মাছ ব্যবসায়ী ও দর্শনাথীদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের সব ব্যবস্থাই রাখা হয়েছে।’