তীব্র তাপপ্রবাহে বোরো ধানে হিটশকের শঙ্কা

84

যশোরসহ দক্ষিণের জেলাগুলোর মাঠে মাঠে যখন ধানের শীষ সোনালি রং ধারণ করতে শুরু করছে, ঠিক তখন তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে মাঠের ফসল। চলতি বছর যশোরাঞ্চলে বোরো আবাদের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ। কিন্তু হঠাৎ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাওয়ায় হিটশকে মাঠের বোরো ধানের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষক। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, অধিকাংশ এলাকায় ধান পেকে ওঠায় তাপমাত্রা বাড়লেও ধানের তেমন কোনো ক্ষতির শঙ্কা নেই।

এপ্রিলের প্রথম দিকে যশোরসহ দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া পরিস্থিতি অনেকটা শীতকালের মতো বিরাজ করলেও মাঝামাঝি সময়ে এসে তা চরম আকার ধারণ করেছে। চার দিন ধরে এ অঞ্চলে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল বেলা ১টায় যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেলা ৩টা নাগাদ এ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়াবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া বিভাগ। এমন পরিস্থিতিতে যশোরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাঠে বোরো ধান হিটশকের কবলে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর এ জেলায় এক লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ব্রিধান-৫০, ব্রিধান-৬০, বিআর ২৮ ও ২৯ ধানের চাষ হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। প্রতিটি ক্ষেতেই ধানের সোনালী শীষ রং ধারণ করতে শুরু করেছে। ধানের ব্যাপক ফলন আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কিছু এলাকায় ধানের ক্ষেতে চিটা দেখা দেয়ায় কৃষক হিটশকে ক্ষতি হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন।

জেলার বাঘারপাড়া এলাকার জামদিয়া এলাকার চাষি আমজাদ হোসেন বলেন, তার ক্ষেতের ধানে সবেমাত্র ধানের শীষ বের হয়েছে। এ বিরাজমান আবহাওয়ার পরিস্থিতিতে তিনি খুবই শঙ্কিত। কিছু ধানের শীষ শুকিয়ে যাচ্ছে খরার কারণে। তিনি বলেন, ১৫ দিন আগেও এ অঞ্চলের তাপমাত্রা অনেকটা শীতের আবহে চললেও হঠাৎ তা বেড়ে তীব্র পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় জমিতে সব সময় সেচ দিতে হচ্ছে। সেচ দিলেও গরমে ধানের শীষ পুষ্ট হতে সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

একই এলাকার চাষি ইকবাল হোসেন বলেন, এবছর শুরুতেই বোরো আবাদের জন্য আবহাওয়া অনেকটা অনুকূলে ছিল, যে কারণে কোনো পোকামাকড়ে ক্ষতি করতে পারেনি। কোনো ঝুটঝামেলা না থাকলে বোরো আবাদের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শেষ সময়ে এ তাপমাত্রা আমাদের চিন্তায় ফেলেছে। হিটশকে বোরো আবাদের ক্ষতি হলে আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না।

এদিকে দাবদাহের কবল থেকে বোরো আবাদ রক্ষার জন্য কৃষকদের জন্য কিছু বিশেষ পরামর্শও দেয়া হয়েছে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে। ক্ষতি থেকে ধান রক্ষার জন্য বোরো ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ধানের শীষে দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই দু-তিন ইঞ্চি দাঁড়ানো পানি রাখতে হবে বলে কৃষি বিভাগের থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, বিরাজমান তাপমাত্রা ধানসহ অন্যান্য ফসলের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে যশোরের বিস্তীর্ণ মাঠে যে বোরো আবাদ রয়েছে, তা অধিকাংশ পেকে উঠতে শুরু করেছে। ফলে এসব ধানের হিটশকে ক্ষতি হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। তবে তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় ধান আগেভাগে পেকে ওঠায় ঝড়বৃষ্টি আসার আগেই কৃষক নির্বিঘেœ ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি বলেন, যেসব এলাকায় বোরো এখনও পেকে ওঠেনি, সেসব এলাকার কৃষকদের ক্ষেতে বেশি বেশি সেচ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।