পাহাড়ে জুমের সোনালি ফসলে কৃষাণ-কৃষাণীর মুখে চাষি

965

জুম চাষ

পাহাড়ে জুম ক্ষেতে এখন পাকা ফসল তোলার ভর মৌসুম। জুমিয়ারা ঘরে তুলেছে জুমের সেই সোনালি ফসল। আর ফলানো ফসল দেখে জুমিয়া নারী-পুরুষের মুখে ফুটেছে হাসি। চোখে আশার আলো। জুম্ম নারীরা ব্যস্ত জুমের পাকা ধান কাটতে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী চাষ হচ্ছে জুম চাষ । জুমিয়ারা পাহাড়ের ঢালে বিশেষ পদ্ধতির এই আদি জুম চাষ করে থাকে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে জুম প্রস্তুত করার জন্য গাছপালা কাটা হয়। মার্চ-এপ্রিলের দিকে শুকনা গাছপালা আগুনে পুড়িয়ে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ বপন করা হয়। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয় ফসল তোলা। বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ির পাহাড়ে পাহাড়ে চলছে নবান্ন উৎসব। তিন জেলার প্রায় ২৫ হাজার ৪শ’ হেক্টর পাহাড় ভূমিতে জুম চাষ হয়েছে এবার।

পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি মানুষের জীবিকার আদিম ও প্রধান উৎস এ জুম চাষ। বাংলাদেশের একমাত্র তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে এ জুম চাষ করা হয়। জুমের পাহাড় এখন পাকা ধানের ভরপুর। তাই এ পাকা ধান বাড়িতে তোলা নিয়ে ব্যস্ত জুমিয়ারা। সারা বছর পরিশ্রম শেষে পাহাড়ি নারী-পুরুষের যখন জুমক্ষেতের পাকা ফসল ঘরে তোলার পর জুম্ম তরুণ-তরুণীরা গানসহ নবান্নের উৎসবে মেতে উঠবে।

তিনটি পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের পাহাড়িদের জুম ক্ষেতে সবেমাত্র শুরু হয়েছে পাকা ধান কাটা। ধুম পড়েছে মারফা, বেগুন, ধানি মরিচ, ঢেঁড়শ, কাকরোল, কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল তোলার কাজ। এরপর ঘরে উঠবে তিল, যব এবং সব শেষে তোলা হবে তুলা। এ মৌসুমে উপযুক্ত জলবায়ু ও বৃষ্টিপাতের কারণে এবং ইঁদুরের উৎপাত কমে যাওয়ায় ভালো ফলন হয়েছে। কোনো সমস্যা ছাড়াই জুমের সোনালি ফসল ঘরে তুলতে পারায় জুম্ম নারী-পুরুষ ফিরে পেয়েছে মুখের হাসি। চোখে ফোটে উঠেছে আশার আলো। জুমে বীজ বপনের ৫ মাস পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের পর ফলিত ফসল দেখে হাঁসি ফুটে ওঠে জুম চাষীদের মুখে।

পৌষ-মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালে জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে রৌদ্রে শুকানোর পর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আগুনে পুড়িয়ে জুম চাষে উপযোগী করে তুলেন জুমিয়ারা। এরপর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পোড়া জুমের মাটিতে সুঁচালো দা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধান, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, তুলা, তিল, ভুট্টাসহ বিভিন্ন রকম বীজ বপন করে থাকে। আর এসব জুমের ধান আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেই পেকে থাকে। তারপর শুরু হয় জুমের ফসল তুলার কাজ। সে সময় মারফা, কাঁচা মরিচ, চিনার, ভুট্টা পাওয়া যায়। ধান পাকে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে। সব শেষে তুলা, তিল, যব ঘরে তোলা হয় কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে।

এ বছর জুমে ইঁদুরের ও অন্যান্য পোকামাকড়ের উপদ্রব না থাকায় ও সঠিক বৃষ্টিপাতের কারণে জুমের ফলন ভালো হয়েছে। তবে জুম চাষীদের চোখেমুখে কিছুটা আনন্দ দেখা দিলেও অল্প পরিমাণ জায়গায় জুম চাষ করে বছরের খোরাকি নিশ্চিত না হওয়ায় তারা চিন্তিত। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মাটির উর্বরতা হ্রাসে কারণে জুম চাষের পাহাড় কমে গেছে। তাই একই পাহাড়ের মাটিতে বার বার জুম চাষ করায় এখন আর আগের মত জুমে ভালো ফলন হয় না। তাছাড়া জুমে এখন সার প্রয়োগ না করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় না।

বান্দরবান জেলা কৃষি কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন জানান, এবার আবহাওয়া ভালা থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। তা ছাড়া জুম চাষে নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে কৃষককে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। এর ফলাফল মিলছে এ বছরের ফলনে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন