পোলট্রিতে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প কালিজিরা

385

Poultry20160719174601

পেলট্রিশিল্পে গৃহপালিত পশুপাখিকে রোগমুক্ত রেখে কম সময়ে অধিক উৎপাদনে অ্যান্টিবায়োটিকের অবাধ ব্যবহার কয়েক যুগ ধরে হয়ে আসছে। ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগে সার্বিকভাবে জনস্বাস্থ্য আজ হুমকির সম্মুখিন। শুধু তাই নয়, অ্যান্টিবোয়োটিক প্রয়োগে রোগে আক্রান্ত পশুপাখির মৃতদেহ খেয়ে বাংলাদেশসহ এশিপোলট্রিতে অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প কালিজিরায়ার বিভিন্ন দেশের শকুন বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

এর ক্ষতিকর প্রভাবে ইউরোপে চিংড়ি রফতানি বিলুপ্তির মুখোমুখি হয়েছিলএ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগে মুরগির ডিম, মাংস ও গবাদি মশুর দুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা সংরক্ষিত খাদ্য খেয়ে মানবদেহে স্লো-পয়জনিং হচ্ছে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারানোসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

যার কারণে আমাদের জনস্বাস্থ্য রয়েছে হুমকিতে। পোলট্রিশিল্পকে অ্যান্টিবায়োটিক ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে অ্যান্টিবায়োটিকের বদলে প্রাকৃতিক উপাদানের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার গবেষণা চলছে বিশ্বব্যাপী। প্রাকৃতিক উদ্ভিদ উপাদানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কালিজিরা। বিশ্বব্যাপী কালিজিরা নিয়ে অনংখ্য গবেষণা হলেও বাংলাদেশে পোলট্রিশিল্পে অ্যান্টিবায়োটিকের বদলে তা প্রয়োগে সাফল্য প্রথম বলে দাবি করেচেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০১১ সালে অ্যান্টিবায়োটিকের বদলে কালিজিরা প্রয়োগের মাধ্যমে দুটি গবেষণা সম্পন্ন হয়। একটি লেয়ার মুরগি ও অন্যটি ব্রয়লার মুরগির ওপর এটি সম্পন্ন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম। গবেষণা সহকারী হিসোবে ছিলেন হাজী মোহাম্মদ দানেম বিজ্ঞন ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচায অধ্যাপক ড. এম আফজাল হোসেন, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের প্রভাষক মো. আবু সাঈদ এবং মাস্টার্স পর্বের ছাত্র মো. নুরে আলম সিদ্দিকী।

প্রথম গবেষণায় উপাত্ত থেকে দেখা যায় অ্যান্টিবায়োটিকের বদলে কালিজিরা প্রয়োগে মুরগির ডিমে প্রায় ৪৩ ভাগ কোলেস্টেরল কমিয়ে আনা সম্ভব। এই কম কোলেস্টেরলসম্পন্ন মুরগির ডিম হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী ও সুস্থ-সবল মানুষের জন্য নিরাপদ বলে দাবি করছেন গবেষকরা। এ ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটানো না গেলেও পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য হিসেবে প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, মানবদেহ একদিনে প্রায় ২১৪-২২০ মাইক্রোগ্রাম কোলেস্টরল ধারণ করতে পারে। কিন্ত অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগকৃত ডিমে প্রায় ৩০০ মাইক্রোগ্রাম কোলেস্টেরল পাওয়া যায়, যা হৃদরোগের জন্য সত্যিই খুব খারাপ সংবাদ। একই সময়ে কালিজিরামিশ্রিত খাবারে মুরগির বৃদ্ধির হার, ডিমের গুণগত মানও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগকৃত খাবারের চেয়ে অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, ওই গবেষণায় দেখা যায়, কালিজিরামিশ্রিত পোলট্রি খামারে ল্যাকটোব্যাসিলাস নামক এক ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশবিস্তার ঘটায়, যা মুরগির পাকস্থলীর খাবার হজম হতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ই-কোলাই নামক এক ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যায়।

২০১১ সালে ওই গবেষণার একটি নাতিদীর্ঘ আন্তর্জাতিক মানের জর্নাল ‘জার্নাল অব অ্যানিমেল অ্যান্ড ফিড সায়েন্স’ এ গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় গবেষণার উপাত্ত থেকে দেখা যায়, কালিজিরামিশ্রিত পোলট্রি খাবারে ব্রয়লার মুরগির দেহের ওজন ও বৃদ্ধির হার সবকিছুই ত্বরান্বিত হয়, যা বাজারের মুরগির চেয়ে অনেক পরিমাণ বেশি। ব্রয়লার মুরগির ব্লাড সিরামের কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড আকস্মিককভাবে হ্রাস পায় এবং এইচিডিএল নামক এক ধরনের উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়। একইভাবে পাশাপাশি ই-কোলাই নামক এক ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ দ্রুত কমে যায়। তাই কালিজিরা প্রয়োগসম্পন্ন ব্রয়লারন মুরগির মাংস অনেকটাই নিরাপদ বলে মনে করচেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।

ড. তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, আমরা প্রাথমিক পোলট্রিতে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প কালিজিরা ।