বাংলাদেশে মাছ চাষের সম্ভাবনা

127

বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। পুকুর উন্নয়ন ও আইন সংশোধন, মৎস্য সংরক্ষণ ও প্রতিপালন আইনের সংশোধন, এর বাস্তবায়ন, গবেষণা প্রভৃতি আশা জাগানিয়া বিষয়। মাছ জাতীয় সম্পদ এ উপলব্ধি প্রাকৃতিক পরিবেশে মাছের ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যায় উৎসাহ বাড়াচ্ছে এবং পোনা অবমুক্ত করে বৈজ্ঞানিক শর্ত পালনে উদ্বুদ্ধ করছে। বদ্ধ ও চাষযোগ্য জলাশয় থেকে অধিক হারে মাছ উৎপাদনে প্রযুক্তিচর্চার বিকাশ ঘটছে। এ সবকিছুই মৎস্য চাষ সম্ভাবনায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। উৎপাদন সম্ভাবনা নিয়ে আরও কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো:

# জলাশয়ের বিস্তৃতি, উপযোগিতা ও উৎপাদনশীলতার ওপর মাছের উৎপাদন নির্ভর করে। বাংলাদেশে নদ-নদী, প্লাবনভূমি, বিল, হ্রদ প্রভৃতি জলাশয় প্রাকৃতিক মাছের অফুরন্ত বৈচিত্র্যের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখেছে। এছাড়া পুকুর-দিঘি, বাঁওড়, ডোবা-নালা প্রভৃতিতেও মাছ উৎপাদনের বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চল ও বিস্তীর্ণ সামুদ্রিক অর্থনৈতিক এলাকায়ও মাছ চাষ করা যায়

# জীববৈচিত্র্যে জলজসম্পদকে সমৃদ্ধ করেছে মাছ। মিঠাপানিতে রয়েছে ২৬০টির বেশি স্থানীয় মাছ। সামুদ্রিক মাছের প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৫০০। এছাড়া উভয় বৈশিষ্ট্যের পানিতে রয়েছে চিংড়ি, কচ্ছপ, শামুক-ঝিনুকসহ মূল্যবান মৎস্যসম্পদ। মৎস্য ও মৎস্যসম্পদের যুগপৎ ব্যবস্থাপনা, চাষ ও উন্নয়নের মাধ্যমে জলজসম্পদের অফুরন্ত সম্ভাবনা অর্থবহ করা যায়

# বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জলাশয় ও নানা প্রজাতির মৎস্য গবেষণার ধারাবাহিকতায় উদ্ভাবিত প্রযুক্তির সম্প্রসারণ-সম্ভাবনাকে আরও বাস্তব করে তুলেছে। ইলিশ মাছের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা, খাঁচা অথবা পেন পদ্ধতির মাছ চাষ, পোনা অবমুক্তকরণ, অভয়াশ্রম প্রভৃতি গবেষণা ও কার্যক্রম উম্মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য বৃদ্ধির সম্ভাবনার পথ সুগম করেছে। এছাড়া মাছ, হাঁস ও মুরগির সমন্বিত মিশ্র চাষ, ধান ও মাছের চাষ, রাজপুঁটি ও তেলাপিয়ার চাষ প্রভৃতি বদ্ধ জলাশয়ের সদ্ব্যবহার ও অধিক মাছ উৎপাদনের সম্ভাবনাকে আরও বেগবান করেছে

# উম্মুক্ত জলাশয় অথবা বিল ব্যবস্থাপনা এখন সরকারি নিয়ন্ত্রণে করা হচ্ছে। অতীতে উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় জলাশয়ের মৌসুমভিত্তিক ইজারা প্রথা প্রচলিত ছিল। এ প্রথায় বিত্তবান ও সুবিধাভোগীরাই লাভবান হতেন। এতে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা ওই সম্পদ থেকে বঞ্চিত থাকতেন। ফলে সম্পদের ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে অব্যবস্থাপনাই প্রাধান্য পেয়েছে, উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তবে বর্তমানে উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া নেওয়ায় দরিদ্র মৎস্যজীবীদের দীর্ঘমেয়াদি ইজারা বন্দোবস্ত দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষিত করা, সঞ্চয় বৃদ্ধি, মাছ উৎপাদনে সচেতনতা বৃদ্ধি, পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনায় আন্তরিকতা চোখে পড়ছে। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করছে এসব উদ্যোগ

# মৎস্য উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারি প্রচেষ্টার সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ের ফলে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্পের আওতায় কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মৎস্য চাষ ও ব্যবস্থাপনায় অংশ নিচ্ছে।