বাণিজ্যিক খামারে মুরগির জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা

1360

jms_agr174

বাণিজ্যিক লেয়ার বা ব্রয়লার খামার একটি লাভজনক শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ছোট খামারগুলো দেশের মহিলা ও যুব সম্প্রদায়ের জন্য লাভজনক একটি পেশা হিসেবে দেখা দিয়েছে।তবে, মারাতœক কিছুরোগ লাভজনক মোরগ মুরগি পালনের জন্য বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে যা আকাংখিত মাত্রার উৎপাদনকে হ্র্স করছে। ভাল জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের জন্য একটি পূর্বশর্ত। জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা হল সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার একটি অংশ যা অবশ্যই রোগ জীবাণুর বিস্তারের সম্ভবনাকে হ্রাস করে।

ব্যবহার পদ্ধতি: মানসম্পন্ন খাদ্য ও পানি প্রস্তুতকৃত খাদ্য যেন গুনগতমানসম্পন্ন হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খাদ্য পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ভালভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।আর্দ্র ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সংরক্ষণ করলে খাদ্যে মাইকোটক্সিন উৎপন্ন হতে পারে। সেই সাথে অন্যান্য জীবাণু যেমন ,সালমোনেলা,  ই-কলাই, ককসিডিয়া ইত্যাদির সংক্রমণ হতে পারে। খাদ্য ও পানির পাত্র যাতে মুরগীর পায়খানা দ্বারা দুষিত না হয় সেজন্য মুরগীর উচ্চতা অনুযায়ী উপরের দিক থেকে পাত্র ঝুলিয়ে দিতে হবে। খাদ্য ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সংরক্ষণ: স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পোল্ট্রি উৎপাদন ও রোগ নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কটিন ও ব্যয়বহুল নয় । নিচের বিষয়গুলো মেনে চললে সহজেই স্বাস্থ্যকরভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ করা যায়।

নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নকরণ: মুরগির খামারের শ্রমিকরা প্রতিদিন পরিষ্কার পরিছন্ন হয়ে এবং হাত পা জীবাণুমুক্ত করে শেডে প্রবেশ করবে। প্রথমে অসুস্থ ও মরা মুরগি দ্রুত সরিয়ে ফেলবে এবং নিয়মিত মুরগির বিষ্ঠা পরিষ্কার করবে।
অযাযিত প্রাণি খাদ্য এবং অব্যহ্নত যন্ত্রপাতি ইঁদুর, বিড়াল, ছুচোঁ ইত্যাদি প্রাণীর বসবাসের জন্য খুবই সহায়ক। এরা নিজেরা বিভিন্ন রোগের উৎস হিসেবে কাজ করে এবং মল মূত্রাদির মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে।

পোকামকড় নিয়ন্ত্রণ: পোকা মাকড় রোগের উৎস ও পরজীবী বা অন্য রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। এক ব্যাচ শেষ করার পর খামারের সকল আবর্জনা, মাকড়সার ঝুল একত্রে কওে কীটনাশক প্রয়েঅগ করতে হবে অথবা কম্পোস্টিং পিটে ফেলতে হবে। সকল যন্ত্রপাতি ও ঘর ঝাড়– দিয়ে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধোয়ার পর জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

হিংস্র জন্তু ও অন্যান্য পাখি নিয়ন্ত্রণ: এরা বিভিন্ন সংক্রামক ও পরজীবীজনিত রোগের জীবাণু বহন করে। মৃত মুরগী যত্রতত্র ফেলে রাখলে সেগুলি খাওয়ার জন্য খামারে কাক বা অন্য বন্য পাখি, বন বিড়াল, শিয়াল, কুকুর ইত্যাদি খামারের পরিচ্ছন্ন পরিবেশে নিশ্চিত করণের মাধ্যমে এবং বন্য পাখি নিয়ন্ত্রক ব্যবহার করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা অত্যাবশ্যক।

মৃত মুরগী সৎকার: মৃত মুরগীর দেহাবশেষ নিজেই রোগের উৎসে পরিণত হয় যা খামারের অন্যান্য মুরগিতে এবং আশে পাশের খামারের সংক্রমণের উৎস হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক উপায়ে মৃত মুরগি সৎকার করা যায়। যেমন-
(ক) পোড়ানোঃ সংক্রামক জীবাণুকে ধ্বংস করার সর্বোত্তম পদ্ধতি। বাণিজ্যিক ভাবে ধোঁয়াবিহীন, গন্ধবিহীন পোড়ানোর চুল্লি বাজারে সহজলভ্য।
(খ) গভীর গর্তে পুতে ফেলাঃ পরিবেশ আইন মেনে বড় গর্ত করে আবর্জনা গভীর গর্তে পুঁতে ফেলাই উত্তম। এতে শিয়াল , কুকুর জাতীয় প্রাণী বর্জ্যের নাগাল পাবে না। সাধারন বর্জ্যের জন্য ছোট গর্ত করে বিভিন্ন বর্জ্য নিষ্কাশন করা যায়।

কমোস্টিং এর মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: কম্পোস্টিং বা পঁচানো হলো প্রাকৃতিকভাবে বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করণের একটি পদ্ধতি প্রক্রিয়াটি চলার সময় নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরিত্যক্ত বর্জ্যের গাঁজন প্রক্রিয়ার ফলে যে তাপ উৎপন্ন হতয় তাতে রোগ জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। এটি বায়বীয় ও তাপ সংবেদনশীল পোল্ট্রি খামার বর্জ্য ধ্বংসের একটি অন্যতম পদ্ধতি। কম্পোস্ট তৈরীর জন্য খামারের একপাশে একটি উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে স্থানটির চারদিকে নিদির্ষ্ট মাপের (দৈর্ঘ্য ৮ ফুট, প্রস্থ ৫ ফুট ও গভীরতা ৫ ফুট) ইট দিয়ে ঘিরে একটি পিট তৈরী করতে হবে। জৈব বর্জ্যের মিশ্রণ, খড়, মুরগীর দেগবশেষ, বিষ্ঠা ও পানির অনুপাত হবে যথাক্রমে ১ঃ১ঃ১.৫ঃ০.৫ (প্রতি স্তরে তিনভাগ পানি যোগ করতে হবে) উক্ত অনুপাত ঠিক রেখে মিশ্রণটি তৈরী হলে দ্রুত এবং গন্ধহীন ভাবে বর্জ্য কম্পোস্টিং হবে। মিশ্রণের তাপমাত্রা ৬০-৭০ ডিগ্রী সে. উঠবে এবং বর্জ্যরে নরম কোষকলার কম্পোস্টিং প্রক্রিয়া ১৪ দিনের মধ্যে সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে।

পৃথকীকরণ: অণুজীবের বিস্তার পৃথকীকরণের মাধ্যমে ঠেকানো সম্ভব। রুগ্ন বা আক্রান্ত মুরগিকে স্বাস্থ্যবান নিরোগ মুরগি থেকে পৃথক করে রাখা উচিত এবং নিরোগ মুরগিকে পরিচর্যার জন্য ভিন্ন শ্রমিক নিয়োগ করা উচিত । সবচেয়ে ভাল হয় রুগ্ন মুরগীকে বর্জ্য হিসেবে সৎকার করে ফেলা, কারণ, এইসব রুগ্ন মুরগি আরোগ্য লাভ করলেও দীর্ঘ সময় ধরে জকীবাণুবাহক হিসেবে কাজ করতে পারে।

ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা: ব্যবস্থাপক, সুপারভাইজার এবং খামারের মালিকগণকে পরিচ্ছন্নতার নিয়মাবলী অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। খামারে দর্শনার্থী প্রবেশ যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে যদি কোন দর্শনার্থী মুরগির শেডে প্রবেশ করতে চান তবে, জুতা পরে জীবাণুনাশক দ্রবণে হাত পা ধুয়ে খামারে প্রেেবশ করতে হবে।

টিকা প্রয়োগ: মুরগিকে সংক্রামক ব্যাধি থেকে রক্ষার জন্য টিকা দেওয়া অত্যাবশ্যক। বিছু রোগ সঠিক সময়ে গুণগত মানসম্পন্ন টিকা প্রদানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ব্যবহার সম্ভবনা: সকল বাণিজ্যিক লেয়ার এবং ব্রয়লার খামারে সর্বত্র ব্যবহার করতে হবে।