যশোরের গদখালীতে ফুল বাজারে রেকর্ড দামে বিক্রয়

30

বসন্ত ও ভালোবাসার উত্তাপে ফুলের দামে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে যশোরের গদখালীর ফুল বাজারে। যুগপৎ এই উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে রীতিমতো ‘আগুন’ লেগেছে গোলাপ, রজনীগন্ধা ও চন্দ্রমল্লিকায়। মাত্র দুদিন আগে যে গোলাপ ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেটি বেড়ে গিয়ে এক লাফে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে। প্রচলিত গোলাপের পাশাপাশি সাদা রঙের চায়না গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। গোলাপের পাশাপাশি জারবেরা, গ্লাডিউলাস, রজনীগন্ধা, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসিসহ প্রায় সব ফুলেরই দাম বেড়েছে প্রতিটি পাঁচ থেকে ১০ টাকা করে।

ফুলচাষিরা বলছেন, এবার গোলাপের পাইকারি দামে রেকর্ড ভেঙেছে। পাইকারি বাজারে গোলাপের এত দাম এর আগে কখনও পাওয়া যায়নি। স্মরণকালের সবচেয়ে চড়া মূল্যে ফুল বিক্রি করতে পেরে করোনার দুই বছরসহ অতীতের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশাবাদী চাষিরা।

গতকাল ভোরে গদখালীর ফুল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের সরব উপস্থিতে বাজারে পা ফেলার জায়গা নেই। বিশেষ করে পহেলা ফাল্গ–ন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দুদিন আগে ফুল মোকামে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। তবে বাজারে এসে ফুলের চড়া দাম দেখে তারা রীতিমতো হতবাক হয়েছেন।

রাজধানীর সাভার থেকে আগত ফুলের পাইকারি ব্যবসায়ী জয়নাল হোসেন এসেছেন গদখালীতে ফুল কিনতে। সাংবাদিকদের দেখে রীতিমতো তিনি ক্ষোভ ঝাড়তে থাকেন ফুলের দাম নিয়ে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গদখালীর ফুল বাজার থেকে ফুল কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে আসছেন। তবে এমন পরিস্থিতি আগে কখনও দেখেননি। মাত্র দুদিন আগে যে গোলাপ কিনে নিয়ে গেছেন ১৫ টাকা দরে সেই গোলাপ আজ ২৫ টাকা দরে কিনে নিয়ে যেতে হচ্ছে। একইভাবে ২০-২৫ টাকার চায়না গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা দরে। এটি রীতিমতো স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বলে দাবি করেন ওই পাইকার ব্যবসায়ী।

তবে এই পাইকার ব্যবসায়ীর এ অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন গদখালীর ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী মঞ্জুর হোসেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এমনিতে ফুলচাষিদের শোচনীয় অবস্থা চলে আসছে। তারপর রাজনৈতিক অস্থিরতা তো ছিলই। কিন্তু এখন সব দিক দিয়ে অবস্থা অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যেমন ব্যবসায়ীরা আসছেন, তেমনি ফুল বেচাকেনাও বেড়েছে। তিনি বলেন, ফুল চাষে অনেক ব্যয় বেড়েছে। তারপর এ বছর সারাদেশে গোলাপ ফুলের ফলনও কম হয়েছে। এ কারণে বিশেষ দিনকে ঘিরে সরবরাহ কম অথচ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম একটু বেশি হচ্ছে।

তৌহিদুল ইসলাম নামে আরেক চাষি বলেন, গদখালীর বাজারে জারবেরা বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৮ টাকায়, রজনীগন্ধা ও ভূট্রা ১৫ টাকায়, ১০০ চন্দ্রমল্লিকা ৫০০ টাকায় ও গ্লাডিউলাস রংভেদে ২০-২৫ টাকায়। ফুলের এ দাম পেয়ে তিনি বেশ খুশি বলে জানান। তিনি বলেন, সব ফুলের মধ্যে গোলাপের যে দাম পাওয়া গেছে তা এই বাজারের ইতিহাসে এটিই প্রথম। ভবিষ্যতেও যেন ফুলের দাম এমন থাকে বলে দাবি করেন তিনি।

রফিকুল ইসলাম নামে আরেক ফুলচাষি বলেন, ফুল চাষে অনেক দিন ধরে লাভের মুখ দেখছিলাম না। আল্লাহ এ বছর আমাদের দিকে নজর দিয়েছেন। এর আগে বিশেষ দিবসে পাঁচ-দশ টাকাও গোলাপের দাম পাননি। যে কারণে অনেক চাষিই ফুল চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তবে এবার বাজার ভালো পেয়ে অনেকেই ফুল চাষকে টিকিয়ে রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, এ বছর ভাইরাসজনিত রোগের কারণে গোলাপের উৎপাদন কম হয়েছে। এ অবস্থায় দাম না পেলে টিকে থাকার কোনো সুযোগ ছিল না। আগামী দুদিনে আরও ভালো দামে ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির নেতা আব্দুর রহিম বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে গোলাপসহ প্রায় সব ধরনের ফুলের উৎপাদন কম হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা অনেকটা সন্দিহান ছিলাম ভালো দাম পাব কি না। তবে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি দাম পেয়ে ফুলচাষিরা বেশ খুশি। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা বেশি দামে ফুল কিনে যে হতাশা প্রকাশ করছেন, তাতে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ সারাদেশে ফুলের উৎপাদন কম হওয়ায় দাম ও চাহিদা দুই-ই রয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরাও বেশি দামে ফুল কিনে লাভবান হতে পারবেন বলে তিনি দাবি করেন।