ঝালকাঠিতে ভীমরুলি ভাসমান পেয়ারা বাজার, ২৫ কোটি টাকার পেয়ারা বেচাকেনা

108

ঝালকাঠির ভীমরুলি ভাসমান পেয়ারা বাজারে এক মৌসুমে অন্তত ২৫ কোটি টাকার পেয়ারা কেনাবেচা হয়। এই বাজারকেন্দ্রিক এলাকার প্রায় এক হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।

এদের কেউ ট্রলারচালক, কেউ মোটরসাইকেলে পর্যটকদের বাজারে আনেন, কেউ বাগানের পেয়ারা পেরে দেন, কেউ প্যাকেট করেন, অনেকে বাজারে খাবার হোটেল দিয়েছেন, ট্রলারে পর্যটক ঘুরিয়ে আয় করছেন কেউ।

স্বরূপকাঠি, বানারীপাড়া ও ঝালকাঠির সীমান্তবর্তী তিনটি খালের মোহনায় গড়ে উঠেছে ভীমরুলি পেয়ারা বাজার। জেলা শহর থেকে কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ি হয়ে সড়কপথে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভীমরুলির ভাসমান পেয়ারা বাজার।

আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র মাস জমজমাট থাকে এ বাজার। ঝালকাঠি সদর উপজেলার ২১ গ্রামে শত শত বছর ধরে পেয়ারার ফলন হচ্ছে।

জানা যায়, ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলার ডুমুরিয়া, ভিমরুলী, কাফুরকাঠি, ইন্দুরকাঠি, শতদশকাঠি, জগদীশপুর, রামপুর, খেজুরা, বৈরমপুর, খোরদপাড়া, বেশাইনখান, মিরাকাঠি, শংকরধবল, হিমানন্দকাঠি, পাঞ্জিপুঁথিপাড়াসহ ২১টি গ্রামে প্রায় ৯০০ হেক্টরে পেয়ারা আবাদ হচ্ছে। ২০২২-২৩ মৌসুমে এখানে ৬ হাজার ৪২ টন পেয়ার উৎপাদন হয়েছে।

ঝালকাঠিসহ পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি ও বরিশালের বানারিপাড়া এলাকার ৩৬টি গ্রামে পেয়ারার এ বাগান গড়ে উঠেছে। এসব এলাকায় প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো বাগানের ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পেয়ারা উৎপাদন হয়। তিন উপজেলার প্রায় ৪৫ হাজার কৃষক ভীমরুলির ভাসমান বাজারসহ আটঘর ও কুড়িয়ানা বাজারে পেয়ারা বিক্রি করেন।

নৌকার মাঝি পরিতোষ জানান, পর্যটককে ১ ঘণ্টা ঘুরিয়ে দেখালে ৩০০ টাকা পান। অনেকে বকশিসও দেয়। ৫০টি ছোট ডিঙি নৌকা ও ট্রলার আছে। পর্যটক পেয়ারার মৌসুমে বেশি থাকে।

এলাকার নারীরাও ভাসমান বাজারে রোজগার করছেন। একটি হোটেলের মালিক সুপ্রিয়া রানী হালদার। তিনি বলেন, এই ভাসমান বাজারকে কেন্দ্র করে অনেকের জীবন-জীবিকার পরিবর্তন হয়েছে। আমি এখানে খাবার হোটেল দিয়ে সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। অনেক নারী এ পেশায় কাজ করে ভালোই উপার্জন করছেন।

পেয়ারাচাষি নীপেন্দ্র মণ্ডল বলেন, আগে এ এলাকার শত শত যুবক বেকার ছিল। ভাসমান বাজারকে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।

২৪ আগস্ট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি মণ পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০০ টাকা। পেয়ারার সঙ্গে অনেকে আমড়া, নারকেল, কাঁকরোল, লেবু, কচু, পেঁপে, কাঁচকলা নিয়ে আসছেন এ বাজারে।

বাজার কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে মালিকানাধীন পার্ক। খালের মধ্যে বাঁশের মাচায় আছে হোটেল। এ রকম একটি হোটেলে বসে ভাত খেতে খেতে পাইকার কাইয়ুম শেখ বলেন, ‘প্রতিদিন এই হাট থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ মণ পেয়ারা কিনছি। এক সময় এখানকার পেয়ারা লঞ্চে ঢাকায় পাঠাতাম। এতে পেয়ারা পচে নষ্ট হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হতাম। পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দ্রুত সময়ে পেয়ারা পৌঁছে যাচ্ছে।

ডুমুরিয়া গ্রামের পেয়ারাচাষি বিপুল মণ্ডল বলেন, গত মৌসুমে পেয়ারার মণ ছিল ৫০০ টাকা। এবার বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। ডুমুরিয়া বাজারের ছোট পাইকার মোস্তফা মিয়া বলেন, বাজারে এক মৌসুমে অন্তত ২৫ কোটি টাকার পেয়ারা বেচাকেনা হয়।

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক ইসরাত জাহান লিলি বলেন, সার্বক্ষণিক বাগান নজরদারি করছেন। চাষিদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ফুল আসার সময় বৃষ্টি না হলে সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এসব বাগানে পেয়ারা গাছ ও জমির ধারণক্ষমতা বাড়াতে সার প্রয়োগসহ পোকা দমনে স্প্রে করাও জরুরি।