লালমনিরহাটে বন্যায় ১,৪০৮ হেক্টর রোপা আমন নষ্ট

81

লালমনিরহাটে তিস্তা-ধরলায় পানি বৃদ্ধির কারণে ১ হাজার ৪০৮ হেক্টরের রোপা আমনের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। একই সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। এতে ৩০টি এলাকার প্রায় শতাধিক ঘর ভাঙনের শিকার হয়েছে। লালমনিরহাট সদর উপজেলার ইউনিয়নগুলো থেকে ইতোমধ্যে ৪৫টি বাড়ির তালিকা করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তর জানিয়েছে। নতুন করে ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে তালিকা করা হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, মানুষজন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার ত্রাণ পৌঁছায়নি। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। ভাঙন অব্যাহত রয়েছে পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, আদিতমারী ও সদর উপজেলায়। সব থেকে বেশি বাড়ি ভেঙেছে লালমনিরহাট সদর ও আদিতমারী উপজেলায়। অন্য দুই উপজেলায় আবাদি জমি ভাঙছে।

এলাকাবাসীরা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন ছবি তুলে নিয়ে গেছেন। ১০ থেকে ১৫ দিনের ভাঙনে ১০০টি জিও ব্যাগ ফেলেছে। সেই জিও ব্যাগও ভেসে গেছে।

এলাকাবাসী ও ইউপি চেয়ারম্যানরা জানান, গত ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে ৩০টি, খুনিয়াগাছ ইউনিয়নে ৮টি, গোকুন্ডার ইউনিয়নের রাজপুরে ২টি ভিটেবাড়ি নদীতে চলে গেছে। বড়বাড়ি ইউনিয়নে ধরলার ভাঙনে ৬৫টি বাড়ি ভেঙেছে।

গোকুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান রশিদ সরকার বলেন, তার গোকুন্ডা ইউনিয়নে ২টি বাড়ি ভেঙেছে। গত তালিকায় এবং বর্তমান তালিকায় এখনও ইউনিয়নের কোনো বাড়ি ভাঙার তথ্য দেয়া হয়নি। আবাদি জমি ভেঙেছে বেশি।

আদিতমারী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম বলেন, আমরা ২৪টি বাড়ির তালিকা করে পাঠিয়েছি। ত্রাণ বরাদ্দ পেলে বিতরণ শুরু করা হবে।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিআর সারওয়ার বলেন, নিয়মিত ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করছি। ইউপি চেয়ারম্যানকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করছি। আমরা তিন ধাপে কাজ করি, আপৎকাল, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি। জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ করা হচ্ছে।’

জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক বলেন, আগের ৭৫৮ হেক্টর জমি নিমজ্জিত হয়েছিল। নতুন করে ৬৫০ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির তালিকার কাজ চলমান রেখেছি।

এদিকে সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, আসামে ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জের যমুনা, করতোয়া, ইছামতী, বড়াল, ফুলজোড়, হুড়াসাগর নদী ও চলনবিলাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। জেলার কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুরে ২ হাজারের বেশি পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এদিকে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টের পর কাজীপুর পয়েন্টেও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যমুনার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হয়েছে সিরাজগঞ্জের প্রায় ৪২টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল। একই সঙ্গে তলিয়ে গেছে এসব অঞ্চলের আবাদি জমি এবং পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার।

গতকাল সকালে সরেজমিন এই দৃশ্য দেখা যায়। তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জে শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে কাজীপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী-তীরবর্তী অঞ্চলগুলোয় স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। তবে পরবর্তী সময়ে উন্নতি লাভ করবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব নদনদীর পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ফলে ঘর-বাড়ি, কবরস্থান ও ফসলি জমিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হচ্ছে। দিশাহারা হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের ভাঙন কবলিত মানুষ। এছাড়া ইতোমধ্যে নি¤œাঞ্চলে পানি প্রবেশের ফলে রোপণকৃত ধানের চারা ও বীজতলা তলিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলাউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, যমুনায় পানি বৃদ্ধির কারণে কাজীপুর ও সদর উপজেলার ৪৪৫ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে রোপা আমন ২৮৫ হেক্টর, সবজি ৪৩ হেক্টর, আউশ ৪০ হেক্টর, বীজতলা ৩২ হেক্টর, কলা ৫ হেক্টর ও আখ ২৫ হেক্টর।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘শনিবার পর্যন্ত জেলার ৪২টি ইউনিয়নে প্রায় এক হাজার ৬৫৭টি পরিবার পানিবন্দি হওয়ার তথ্য ছিল। সেটা আজ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজারে। প্রতিদিন পানিবন্দির সংখ্যা বাড়ছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৭৪০ মেট্রিক টন জিআর চাল, ১৭ লাখ নগদ টাকা, দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, গোখাদ্যের জন্য পাঁচ লাখ ও শিশুখাদ্যের জন্য দুই লাখ টাকা মজুত রয়েছে।’

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জিত কুমার সরকার বলেন, ‘যমুনা নদীসহ জেলার ছোট-বড় সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধারণা করছি, পানি বৃদ্ধি পেলেও বড় ধরনের বন্যার সম্ভাবনা নেই।’