রাজশাহীতে নিত্যপণ্যের সরকারি দাম মানছে বিক্রেতা

22

রাজশাহীর বাজারে নিত্যপণ্যের সরকারি নির্ধারিত মূল্য অনেক বিক্রেতা অমান্য করছে, এতে ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, চাল, ডাল, তেল, আলু এবং পেঁয়াজের মতো প্রাথমিক পণ্যগুলির দাম নির্ধারিত সীমার বাইরে বিক্রি হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উপর বিরাট চাপ সৃষ্টি করছে। যদিও ব্যবসায়ীদের দাবি, তারাও বেশি দামে পণ্য কিনছেন। সেজন্য দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না।

বিক্রেতারা মূলত বাড়তি মুনাফার আশায় এবং পাইকারি বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে এই অনৈতিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে, রাজশাহীর সাধারণ ক্রেতারা জানান, সরকারি নির্ধারিত দামের তুলনায় বাজারে পণ্যের দাম অনেক বেশি। এই অবস্থায়, সাধারণ মানুষের পক্ষে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে চলা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থার প্রতিকারের জন্য, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলিকে বাজারে নজরদারি বৃদ্ধি এবং নির্ধারিত দাম মানার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়াও, অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে জরিমানা এবং শাস্তির মতো ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে ভোক্তারা।

ভোক্তাদের দাবি, এই অনিয়ম কেবল তাদের অর্থনৈতিক চাপ বাড়াচ্ছে না, বরং তাদের ভোক্তা অধিকারের উপরেও আঘাত হানছে। ভোক্তারা মনে করেন, সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা গুলোর উচিত আরো কঠোর নজরদারি এবং অভিযান চালিয়ে বাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। যারা সরকারি দাম মেনে চলছেন না তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। ভোক্তারা বলছেন, অভিযোগ দায়ের করার জন্য সহজ ও সাশ্রয়ী পদ্ধতির প্রয়োজন, যাতে তারা তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। এই সমস্যার সমাধানে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য।

নগরীর কাঁচাবাজার সাহেব বাজার মাস্টারপাড়ায় বাজার করতে এসেছেন এনোয়েতুর রহমান। তিনি বলেন, সরকার শাকসবজি ও মাংসের দাম কমিয়েছে, কিন্তু এর কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। কিন্তু দাম বাড়লে তা অবশ্যই প্রভাব পড়ে। আমরা সাধারণ মানুষ, সীমিত আয়ে বাঁচি। এমন দাম বৃদ্ধি আমাদের কষ্টে ফেলেছে।

জালাল উদ্দিন নামে এক ক্রেতা বলেন, সরকার যদি বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, তাহলে অচিরেই মূল্য আমাদের ক্রয়সীমায় নেমে আসবে। এজন্য নিয়ন্ত্রণের পরিধি বৃদ্ধি করা দরকার।

এদিকে সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ছোলা বাজারে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, এর দাম হওয়া উচিত ৯৮ টাকা। একইভাবে, ১২০ টাকা মূল্যের মসুর ডাল বাজারে ১৪০ টাকা, ৯৩ টাকা মূল্যের খেসারি ডাল ১৩০ টাকা, এবং ১৬৫ টাকার মুগডাল ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে জাহিদি খেজুরের প্রতি কিলোগ্রামের মূল্য ১৫৫ টাকা নির্ধারিত করা হলেও, রাজশাহীর বাজারে এটি নির্ধারিত দামে পাওয়া যাচ্ছে না। সর্বনিম্ন মূল্যে খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা প্রতি কিলোগ্রামে। এছাড়া, সাগর কলার হালি খুচরায় ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও, এটি ৩৬ থেকে ৪০ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে। চিড়া এবং বেসনের খুচরা মূল্য যথাক্রমে ৬০ এবং ১২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে কিন্তু বাজারে চিড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং বেসন ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের সর্বোচ্চ খুচরা দাম ৬৬৪ টাকা এবং ছাগলের মাংসের দাম ১০০৩ টাকা নির্ধারিত হয়েছে। তবে, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে; গরুর মাংস ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০ টাকায়।

ফলের দোকানদার মাইনুল ইসলাম জানান, আমরা যে মূল্যে ক্রয় করি, সেই অনুযায়ীই বিক্রয় করি। বৃহস্পতিবার পেয়ারা ৭০ টাকা কেজিতে কিনেছিলাম। এরপর সেগুলো ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রয় করেছি। আর শুক্রবারে ৬০ টাকা কেজিতে ক্রয় করা হয়েছিল এবং ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রয় করেছি।

নগরীর সাহেববাজারের মাংস বিক্রেতা জামাল উদ্দিন বলেন, গরু ক্রয়ের যে খরচ, তার অনুপাতে আমরা বিক্রয় করি। এখানে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা লাভ হলেও তা যথেষ্ট। গরুর দাম বেশি, আমরা কীভাবে সামলাবো? সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব নয়।

সরকার দ্বারা নির্ধারিত মাছের মধ্যে, চাষের পাঙাশ মাছের খুচরা মূল্য ১৮১ টাকা এবং কাতলা মাছের সর্বোচ্চ দাম ৩৫৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এই মাছগুলি নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে না। প্রতি কেজি পাঙাশ মাছ ৩৫০ টাকায় এবং কাতলা মাছ ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

১৭৫ টাকায় ব্রয়লার মুরগি এবং ২৬২ টাকায় সোনালি মুরগি ক্রয়ের প্রত্যাশা ক্রেতাদের মধ্যে ছিল। কিন্তু বাস্তব চিত্র এই প্রত্যাশার সঙ্গে মেলেনি। বাজারে ব্রয়লার মুরগির মূল্য উঠেছে ২০০ টাকা প্রতি কেজিতে, অন্যদিকে সোনালি মুরগির দাম নির্ধারিত হয়েছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা প্রতি কেজিতে।

রাজশাহীর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক আফরিন হোসেন জানিয়েছেন, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে এবং নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ইব্রাহীম হোসেন বলেন, রাজশাহীতে নিত্যপণ্যের দাম বেশি নেওয়া ও সরকারি নির্ধারিত দাম উপেক্ষা করায় ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে সচেতন এবং বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়েছি। দোকানদারদের মধ্যে যারা সরকারি দর উপেক্ষা করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ভোক্তাদের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত করা হয় এবং প্রয়োজনে জরিমানা ও জেল দণ্ডের মতো শাস্তি প্রদান করা হয়। আপনারা যেগুলোর দাম বাড়ছে আমাদের বলুন আমারা দেখবো। আমরা ভোক্তাদের সচেতন হতে এবং অবৈধভাবে দাম বৃদ্ধি পাওয়া পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে উৎসাহিত করি। সকল ভোক্তার অধিকার সুরক্ষায় আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।