২ ঘন্টার ব্যবধানে মধ্যস্বত্বকারির লাভ খামারির দ্বিগুণ!

229

আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মতো পোল্ট্রি পণ্যের দাম উঠানামা করছে প্রতিনিয়ত। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের মুরগির কেজিতে দাম কমেছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। দামের এই সিন্ডিকেট পোল্ট্রি পণ্য উৎপাদনকারী খামারির তুলনায় মাত্র ২ ঘন্টার ব্যবধানে দ্বিগুণ মুনাফা করে নেয়। অথচ সারা মাস খামারি ঐ মুরগি লালন পালন করে বিক্রয়োপযোগী করে পাচ্ছেন মধ্যস্বত্বকারীর অর্ধেক!

রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর এলাকার বাসিন্দা মুস্তাকিম বিল্লাহ। দীর্ঘদিন ব্রয়লার মুরগি পালন করে বিক্রি করছেন। এক মাস বয়স হলেই খামার থেকে একজন এসে নিয়ে যেতো। ফোন করে জানালে পাইকারি দাম হিসেবে বাজারের তুলনায় ২০ থেকে ২৫ টাকা কম দামে কিনে নিতো। এই চালানে তিনি ক্ষোভে-দুঃখে বাচ্চা তোলেননি।

জানতে চাইলে মুস্তাকিম বলেন, বাজারে যে ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে সে মুরগি আমাদের বিক্রি করতে হয় ১২০ থেকে ১২৫ টাকা হিসেবে। ১ হাজার বয়লার বাচ্চা একদিন বয়স থেকে ৩০ দিন অর্থ্যাৎ ৮’শ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজন করতে প্রায় ৬০ বস্তা খাবার খায়। প্রতিবস্তা খাবার বর্তমানে ৩১৬০ টাকা দাম লেগেছে। প্রতিকেজি মুরগির উৎপাদন খরচ ১১০ টাকার উপরে। আর বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। হিসেব করলে প্রতিটা মুরগিতে ১০ টাকা লাভ হলে ১০ হাজার টাকা লাভ হয়। কিন্তু সব তো আর বাঁচেনা। সবমিলিয়ে আমরা সারামাস কষ্ট করে ৮ থেকে ১০ হাজার লাভ করলে ২ ঘন্টার ব্যবধানে মধ্যস্বত্বকারিরা এসে কেজিতে ১০ টাকা লাভ করে নিয়ে চলে যায়। অথচ একই লাভ এক মাসেও আমরা পাইনা।

খামার বন্ধ করে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা খামারিরা কিছু বলতে পারছি না। খাদ্যের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে লাভ করার কোন উপায় নাই। তাই খামার আপাতত বন্ধ। খাদ্যের দাম সরকার কমালে খামার চালু করবো। অযথা লোকসান দিয়ে ঘরবাড়ি বিক্রি করা যাবে না। মধ্যস্বত্বকারি থাকবে তবে দাম বাড়ালে আমাদের কোন লাভ আসেনা।

হরিপুর এলাকার পোল্ট্রি খামারি সাকিব হোসেন বলেন, খামারে মুরগি উৎপাদন করার পর দাম পড়ে যায়। ৩ হাজার টাকার উপরের খাদ্য খাইয়ে ১২০ টাকা কেজি মুরগি বিক্রি করে কোন লাভ নাই। যা লাভ হয় তা থাকেনা। মূলত, রাজশাহী থেকে ১ দেড় ঘন্টায় বা দু-ঘন্টার ব্যবধানে আমাদের মুরগিতে মধ্যস্বত্বকারিরা লাভ করে আমাদের চেয়ে বেশি। ব্রয়লার অন্তত ১৪০ টাকা পাইকারি ভাবে বিক্রি করলে লাভ আসবে। তবে, মাঝখানের এজেন্ট যদি না থাকে তাহলে খামারিরা বেশি লাভ পাবে এটা নিশ্চিত।

রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে লাখ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছেন খামারিরা। তবে মাঝখানে দাম বাড়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন। অনেকে পুুঁজি সংকটে বাচ্চা না কিনে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রায় ৬৫ থেকে ৭৫ শতাংশ খামার বন্ধ করায় বাজারে মাংসের যোগান কমে যায়। আশার দিক গরু-খাশির মাংসের দাম বেশি হওয়ায় ঈদের পরে ব্রয়লারসহ বিভিন্ন মুরগির দাম বাড়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।

এবার রাজশাহী সাহেববাজরের পোল্ট্রি মুরগি বিক্রেতা “মুরগির দোকান” প্রতিষ্টানের মিঠু হোসেনের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, বাজারে মুরগির টান রয়েছে। আপাতত দাম একটু কম কিন্তু তা থাকবেনা। ঈদের পর মুরগির কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে যাবে এরকমই মনে হচ্ছে। এখন পাইকারি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা কিনতে হচ্ছে। খুচরা আমরা ৫ টাকা লাভে বিক্রি করি। আমরা যাদের থেকে কিনি তারা কিছুটা লাভ করে।

বর্তমান বাজারদর জানতে চাইলে তিনি জানান, ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, সোনালী ২৪০ টাকা, সাদা কক ২২০ টাকা, দেশী ৪৪০ টাকা এবং লাল কক ২৪০ টাকা দরে বিক্রি করছি।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৮জুন ২০২২