আসলেই কি কমেছে গরুর মাংসের দাম?

86

রাজধানীর বাজারগুলোতে দাম কমেছে গরুর মাংসের। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫৮০-৬৫০ টাকায়— এমন খবর চাউর হয়েছে গত কয়েকদিন ধরে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। ঢাকার বেশিরভাগ বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। বাজার ও মানভেদে হাড়সহ ও হাড় ছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকার মধ্যে। বিক্রেতারা বলছেন, দাম কমার কোনো খবর তারা জানেন না। সচরাচর যে দামে গরুর মাংস বিক্রি করতেন এখনো একই দামেই মাংস বিক্রি করছেন তারা।

সম্প্রতি রাজধানীর নিউমার্কেট, আজিমপুর, পলাশী, কলাবাগান, হাতিরপুল, ধানমন্ডি ও আশপাশের মাংসের দোকানের বিক্রেতা ও মহাজনরা এমন তথ্য জানান।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার খুচরা বাজারগুলোতে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও দাম এই একই ছিল। আর বর্তমান দামের তুলনায় এক মাস আগে বাজারে গরুর মাংসের দাম ছিল ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা। অর্থাৎ এক মাসেই মূল্য হ্রাস পেয়েছে ৩.২৭ শতাংশ।

তবে এক বছর আগে এই সময়ে প্রতি কেজি দাম গরুর মাংসের ছিল ৬৬০ থেকে ৬৭০ টাকা। সে হিসেবে বর্তমান দামের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, এক বছরে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ৮.৮২ শতাংশ।

নিউ মার্কেটের বনলতা কাঁচাবাজারের নূর মোহাম্মদ স্টোরের মালিক মো. কিরণ বলেন, সম্প্রতি গরুর মাংসের দাম কমেনি। গত রমজানের সময় হঠাৎ দাম বেড়েছিল। অবশ্য তার কয়েকদিন পরেই দাম আবার কমেছে। তারপর থেকেই দাম অনেকটা অপরিবর্তিত আছে। তবে ক্রেতার পরিমাণ অনেক কমেছে। আগে দৈনিক যে পরিমাণ মাংস বিক্রি হতো, গত কয়েক মাস ধরে তেমন বাজার নেই। দিনে মাত্র এক মণের মতো মাংস বিক্রি করতেও কষ্ট হচ্ছে। আমরা ফ্রেশ ষাঁড়ের মাংস ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।

কম দামে কয়েক জায়গায় গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে, এমন তথ্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, যারা কম দামে মাংস বিক্রি করছে তারা অতিরিক্ত চর্বি দিয়ে মাংস কমিয়ে দিয়েছে। কামরাঙ্গীরচর ও কেল্লার মোড়সহ কয়েকটি জায়গায় এমন কাজ করছে। মানুষ দাম কম জেনে কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। কিন্তু সেই মাংসের মান কেমন সেটি জেনে নেওয়া দরকার। আমরা অতিরিক্ত চর্বি দেই না। ক্রেতারা ৬০০ টাকা দিয়ে যে মাংস কিনছেন, সেই মাংসে চর্বি বাদ দিলে দেখা যাবে আসলে দাম পড়েছে প্রতিকেজি ৮০০ টাকা।

একই মার্কেটের জিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক জিয়াউদ্দিন বলেন, গত কয়েক মাস ধরে একই দামে আমরা মাংস বিক্রি করছি। নতুন করে দাম কমার কোনো খবর আমরা পাইনি। আমরা স্বল্প লাভ করি। যে জায়গা থেকে মাংস পাইকারি দামে কিনে আনি সেখানেই দাম বেশি। দাম কমানোর কোনো সুযোগ নেই। যারা কম দামে মাংস বিক্রি করছে তারাই বলতে পারবে কীভাবে এত কম টাকায় বিক্রি করছে। আমরা দেশি ষাঁড় দেখে কিনে তারপর জবাই করে মানুষের জন্য নিয়ে আসি। এখানে ছলচাতুরীর সুযোগ নেই।

বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলেও জানা যায়, ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যেই গরুর মাংসের বাজার সীমাবদ্ধ রয়েছে। হেলাল উদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন, সবকিছুর দামই তো বেশি। গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজি নিলে হাড়-চর্বি বেশি দেয় আর মাংস কম থাকে। ৭০০ টাকায় নিলে মাংস কিছুটা বেড়ে হাড়ের পরিমাণ কমে আসে। আর ৭৫০ টাকায় হাড় ছাড়া মাংস মিলছে। গত কয়েক মাস ধরে গরুর মাংসের বাজার এমনই। আবার বিভিন্ন বাজারভেদেও দাম ওঠা-নামা করে। বিক্রেতারা যা বলে সেটাই আমরা বিশ্বাস করি। কিছু তো করার নেই। তারা আমাদের ষাঁড় গরু বলে দিলে আমরা সেটাই বিশ্বাস করে খাই। বাকিটা তারা জানে। আমাদের তো আর যাচাই করার সুযোগ নেই।

রুবিনা জাহান নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ৭০০ টাকায় এক কেজি গরুর মাংস কিনেছি। এরা (কসাই) সুযোগ পেলেই হাড় বেশি দিয়ে দেয়। সেজন্য দাঁড়িয়ে থেকে হাত দিয়ে মাংস দেখিয়ে দিলাম। তারপরও জোর করে হাড় বেশি দিয়ে দিয়েছে। প্রতিটি জিনিসেরই দাম বেশি। কিছু জিনিসের দাম একটু কমলেও আমরা সাধারণ মানুষ স্বস্তি পেতাম। ৬০০-৬৫০ টাকা গরুর মাংসের কেজি হলে সবাই কমবেশি একটু খেতে পারত। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা নজর দিলে সাধারণ মানুষের জন্য অনেক ভালো হতো।